তরুণদের উগ্রবাদে জড়ানো সহজ
তরুণরা জড়িয়ে পড়ার অনেকগুলো কারণ আছে। একটি কারণ অর্থনৈতিক, আরেকটি রাজনৈতিক। বাংলাদেশে যে ধর্মান্ধ রাজনীতিটা চলছে, সেটি হচ্ছে ভুল। এটা বিজয়ের মাস। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ নির্বিঘেœ ধর্ম পালন করবে। এই বাঙালি জাতিয়তাবাদ হলো, তুমি চাইলে ধর্ম নিরপেক্ষভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে বাস করতে পারো। শুধু মুসলমানের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ হলো মুসলমানদের রক্ষক। যখন বিদেশীরা আসতো, কোরআন প্রতিযোগিতা চলতো। জিয়াউর রহমানের সময় বিভিন্ন মাদ্রাসা, মক্তব চালু হলো। এবার আরও প্রশ্রয় পেল এরশাদের সময়। রোববারের পরিবর্তে শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করা হলো। টেলিভিশনে আজান দেওয়া, মাথায় ঘোমটা দেওয়া শুরু করলো। যুদ্ধাপরাধী যারা ছিল তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় গোড়ামি ঢুকে পড়েছে। এটা পাকিস্তান আমলেও ছিল না। বাংলাদেশ তো মুসলমানদের দেশ। সংখ্যালঘুদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার ঘটে, তারা দেশ ছেড়ে বেরিয়ে যায়। পারিবারিকভাবে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক হলো। আমাদের স্কুলে তো দেখি না, মেয়েরা মাথায় ঘোমটা দিয়ে স্কুলে যায়। তরুণদের মগজ ধোলাই শুরু করলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো। এই সব প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচুর অর্থ ঢালে। তারা মনে করে সমাজের ব্যাভিচার, অনাচারের জন্য ধর্মই দায়ী। ধর্মটা যেহেতু খুবই সেনসিটিভ জায়গা, ফলে তারা ধর্মের মূল বাণীগুলো না দিয়ে অন্য ধর্মের ওপর দোষারোপ করছে। পুঁজিবাদী সমাজের বিরুদ্ধে কিন্তু তারা কোনো কথা বলে না। সেটা তারা বলছে না। তারা বলছে কাফেরদের খতম করতে হবে। খতম করলে আমরা জান্নাতে যেতে পারবো। যেহেতু তরুণরা সব সময়ই প্রতিবাদ করে, তাই এটা তাদের জন্য একটা আদর্শের জায়গা। আগে আমরা ভেবেছি, গরিব ছেলের এ সবে জড়িত। তারা খেতে পায় না অর্থের লোভে। এখন দেখছি ধনী ছেলেরাও এসবে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের পরিবার পাপাচার, অনাচারে ভরা। তারা স্যুপ খায়, বড় প্রতিষ্ঠানে পড়ে। বিদেশে চলে যায়। তাদের বলা হয়, তুমি তো এ জীবনে তোমার সব চাহিদা পূরণ করে ফেলেছো। পরলোকের জন্য কী করেছো? এখন যদি শহীদ হও তবে জান্নাত পাবে। বেহেস্তে যেতে হলে আমাকে এই কাফেরগুলোকে মারতে হবে। এই ভাবে ব্রেইন ওয়াশ করা হয়। তরুণদের উসকানো সহজ। ধনী-গরিব-মধ্যবিত্ত বিশেষ করে তরুণেরাই এখন উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ছে।
পরিচিতি : অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢা.বি.
মতামত গ্রহণ : সানিম আহমেদ
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসইন