অভিনব উপায়ে পাক হানাদার হত্যাকারী সুন্দর আলী রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা বঞ্চিত
রিকু আমির : ডাব ও কলায় ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে বিষ মিশিয়ে বিভিন্ন বাড়ির উঠানে নাগালের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখতেন গোপালগঞ্জ কোটালিপাড়ার সন্তান মো. সুন্দর আলী শেখ। যা পাক হানাদাররা খেয়ে মারা যেত। অথচ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন পর্যন্ত তার ভাগ্যে রাষ্ট্রীয় কোনো সহযোগিতা জোটেনি। অথচ গ্রামেই পাক সেনাদের গুলিতে তার বড় ভাই জোবেদ আলী শেখ ও মেজোভাই নজর আলী শেখের মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই ডাব-কলায় বিষ মিশিয়ে পাক হানাদার হত্যার মাধ্যমে সুন্দর আলী মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে যান। ৮৪ বছর বয়স্ক সুন্দর আলীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকার উত্তরায়। সেখানেই স্বামী-সন্তানসহ থাকেন তার মেয়ে পিঠা বিক্রেতা নূরজাহান। ঢাকার বুকে রিকশা চালিয়ে জীবনধারণকারী সুন্দর আলী সেখানে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের মৃত ওফাজ উদ্দিন শেখ ও মাজু বিবি দম্পত্তির তৃতীয় সন্তান সুন্দর আলী। এ গ্রামের আলমগীর মেম্বারের গোষ্ঠীগত চাচা হন তিনি। ৫ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছাড়া সবাই পৃথিবী ত্যাগ করেছেন।
ডাব-কলায় বিষ মিশিয়ে হানাদার হত্যার কিছুদিনের মধ্যে তিনি তারই গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েতের দলে যোগদান করে তার বাড়ির খুব কাছেই অবস্থিত বরিশালে চলে যান। সেখানে রামশীল, কোদালধোয়া নামক স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন বাবুর্চি বেশে। দলের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে, গাছে গাছে চড়ে ফলমূল, তরকারি, চাল-ডাল সংগ্রহ করে রান্না করতেন। এর প্রায় ৫ মাসের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাদ গ্রহণ করেন সুন্দর আলী। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত সুন্দর আলী এখন ঢাকার রায়ের বাজারে একটি জীর্ণশীর্ণ ভাড়া বাসায় থেকে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পান না বলে দাবি করছেন।
তিনি জানান, এরপর গ্রামে প্রচ- অভাব দেখা দেয়। তখন গ্রামেরই একজনের পরামর্শে চলে আসেন ঢাকায়। প্রথমদিকে কুলিমজুর ছিলেন। ঢাকায় আসার ১০ বছর পর জানতে পারেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা হয়েছে, যার মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন অনেকেই। এটা শুনে বাড়ি যান এবং জানতে পারেন, তার গ্রাম থেকে যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাতে তার নাম নেই। এরপর গ্রামের নানান জনের কাছে নাম তালিকাভুক্ত করতে গিয়েও ইতিবাচক সাড়া পাননি। আবার ঢাকায় এসে শুরু করেন কঠোর পরিশ্রমী জীবন-যাপন।
পৈত্রিক সূত্রে গ্রামে দু’শতক জমির সাবেক মালিক সুন্দর আলী জানান, খাজনা না দিতে পারায় সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সেই জমি।
আপনি মুক্তিযোদ্ধা- এর সাক্ষী কেউ আছে কিনা- প্রশ্নের উত্তরে সুন্দর আলী জানান, দলনেতা হেমায়েত তো মারা গেছেন। এখন জীবিত আছেন, তার দলেরই আরেক সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হাসেন সরনামা। তার কাছে গেলেই সত্যতা মিলবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুন্দর আলীর পরিচয়।
সুন্দর আলীর স্ত্রী মরিয়মের মৃত্যু হয় প্রায় ২ বছর আগে। প্রায় ৭ বছর আগে কর্মস্থলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিকলাঙ্গ হয়ে যান তার বড় ছেলে ফজলুল। বর্তমানে যিনি ঢাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। সুন্দর আলীর দুই মেয়ে নূরজাহান (৪২) ও রহিমুনের (৩৬) বিয়ে হয়েছে বরিশালে। নূরজাহান স্বামী-সন্তানসহ ঢাকা উত্তরায় পিঠা বিক্রি করে জীবন ধারণ করছেন।