প্লিজ!একটু লজ্জিত হবেন কি!
ইলিয়াস আলমগীর
আমাদের বড়রা বলেন, নাগরিকদের দক্ষতা এবং সততাই হলো কোন দেশের সমৃদ্ধির মূলকথা! সৎ এবং দক্ষ নাগরিকদের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যায় বিশ্বদরবারে। বুক টান করে নিজস্ব বিভায়।বিজ্ঞজনেরা বলেন,সততা এবং দক্ষতা এদুটো গুণ নাগরিকদের মাঝে সুনিপুণভাবে সমন্বয় ঘটে শিক্ষার মাধ্যমে। সুনাগরিক গড়তেই বোধ করি জাতিসংঘ ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৩ ধারায় শিক্ষাকে সর্বজনীন অধিকার হিসাবে স্বীকার করেছে! বাংলাদেশ সংবিধান ১৭(খ.গ) অনুচ্ছেদ বলে ‘যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।’ ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত’ ও ‘সদিচ্ছাপ্রণোদিত’ শব্দদ্বয় সুনাগরিক হওয়ার বিশেষ দুটি গুণ সততা এবং দক্ষতার প্রতি অর্থবহ নির্দেশক। শিক্ষার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য যাই হোক, সাধারণত রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে সৎ এবং দক্ষ নাগরিক তৈরী করা! বাংলাদেশ এ লক্ষ্য পূরণে খুব যে সফল নয় সেটা সবারই জানা কথা! আমাদের দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থা যেসব সন্তাদের প্রসব করছে তাদের নিদারুণ হতাশায় বাংলার আকাশ ও ভারি আজ! এ পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে!
একটা উদাহরণ দিই, ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম প্রতি বছরের মতো এবারও গ্লোবাল হিউম্যান ক্যাপিটাল রিপোর্ট ২০১৭ প্রকাশ করেছে। সেখানে ১৩০ টি দেশের মধ্যে এই সূচকে বাংলাদেশ এ বছর নেমে এসেছে ১১১তম অবস্থানে। যেখানে গতবছর ছিল ১০৪তম,২০১৫সালে ৯৯তম। জরিপের পক্ষে-বিপক্ষের মত একপাশে রাখলে সরলভাবে যেটা ফুটে ওঠে সেটা হচ্ছে আমাদের অধঃপতন! তাই শিক্ষা ব্যবস্থাকে মূল উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য এখনই ব্যবহারিক শৈলীতে বিন্যস্ত করা সময়ের বড় দাবি। পাঠক! একটু ভিন্ন স্বাদ দিই এবার।আলফ্রেল নোবেল বিখ্যাত নাম। ১৮৬০ সাল।পাথর ভাঙ্গার সহজ উপায় খুঁজতে গিয়ে নাইট্রো-গ্লিসারিনের সাথে সিলিকার মিশ্রণে একধরনের উদ্বায়ী পেষ্ট তৈরী করেন তিনি!যা ডিনামাইট নামে পরিচিত।প্রাথমিকভাবে তার উদ্দেশ্য সফল হলেও পরে তিনি উপলব্দি করেন এটা মানুষকে পঙ্গু এবং হত্যা করার কাজেই বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে।এসব দেখে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত ও লজ্জিত হন। দ্য ফাদার অপ এটমিক বোম্ব বলা হয় রবার্ট ওপেনহেইমারকে! দ্বীতিয় বিশযুদ্ধকালে নিজ দেশের নাগরিকদের নিরপদ বিশ্ব গড়তে তিনি যে বোম তৈরী করেন,এর অপব্যবহার দেখে তিনিও অত্যন্ত লজ্জিত হন।নিজেদের আবিস্কারের কুফল দেখে লজ্জিত হয়েছেন এমন অনেকেই আছেন। বিপদজনক রাইফেল একে-৪৭এর জন্য মিখাইল কালাশনিকভ, পিপার স্প্রের অপব্যবহারের জন্য এর উদ্ভাবক কামরান লোমানের নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের এ অনুশোচনা পরবর্তী প্রজন্মকে অবশ্যই সতর্ক বার্তা দিয়েছে! জনগন সংশ্লিষ্ট কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা অবশ্যই তাদের পথ দেখায়,ভাবতে শেখায়।
আমাদের বাংলাদেশের অকৃতকার্য যোগ্য বেকার তৈরীর ব্যবস্থাপনার জন্য কেউ কি একটু লজ্জিত হতে পারেন! এ লজ্জায় আপনারা ছোট হবেন না,ওপরে তো বড়দের উদাহরণ দিয়েছি।তারা ছোট হননি! আপনারা এ শিক্ষাব্যবস্থায় লজ্জিত এটা বললে শত শত শিক্ষার্থী নিজের মতো করে নিজেকে গড়ে তোলতে সাহসী হবে! অনুশোচনায় আপনারাও নতুন কিছু ভাবতে প্রয়াসী হবেন! দেশের স্বার্থে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কি একটু লজ্জিত হতে পারেন! প্লিজ! একটু লজ্জিত হবেন কি!
লেখক : সাংবাদিক/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ