শিক্ষামন্ত্রীর অসহায়ত্ব ও আমলাতন্ত্রের অগ্রযাত্রা
কোথাও অসহায়ত্ব, কোথাও দাম্ভিকতা, কোথাও হতাশা, অধিকন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে আমলা ও তাদের প্রভুদের আধিপত্য এখন সর্বত্র। আমলারা এখন অপ্রতিরোধ্য। এর পিছনের কারণ বর্তমান সরকার এখন আমলা নির্ভর। এছাড়া সরকারের কোন উপায় নাই। কারণ, সরকার জানে তারা অনির্বাচিত। জনগণের ভোটে যখন শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচিত নয়, সেহেতু আস্থার প্রশ্নে সরকার ও জনগণ পারষ্পারিক বিরোধী অবস্থানে যেমন থাকার কথা, তেমনি রয়েছে। গণতন্ত্র হত্যার জন্য বা গণতন্ত্রের পথ নিয়ন্ত্রণ বা রুদ্ধ করার জন্য আমলাদের বর্তমান কর্মকান্ডই যথেষ্ট, এর বেশী কিছু প্রয়োজন হয় না। আমলারাও “গণতন্ত্র” বিহীন সমাজ ব্যবস্থা পছন্দ করেন। কারণ, গণতন্ত্র থাকলে মানুষের মত প্রকাশ সহ প্রজাতন্ত্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহীতা করতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কর্মকর্তাদের দ্বারাই গুরুতর অপরাধ সংক্রামিত হওয়ার একমাত্র কারণ তারা জবাবদিহীতার উর্দ্ধে। ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় পত্রিকান্তে প্রকাশ “গত ১১ আগস্ট দুপুর ১২-০০ ঘটিকায় ধুরাইল বাজারে সিরাজুল ইসলামের দোকানের সামনে থেকে ঝর্ণা বেগমকে ধরে নিয়ে যায় ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া। থানায় নিয়ে তার নিকট ৫ লক্ষ টাকা দাবী করেন। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। টাকা দিতে অস্বীকৃত জানালে ঐদিন রাত ৩-০০ ঘটিকার দিকে ঐ নারীকে ওসি’র রুমে নিয়ে আসে। এ সময় ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওরাবেস উদ্দিন সুমন ও ওসি তাকে উলঙ্গ করে শারীরিক নির্যাতন করে।” পত্রিকান্তরে প্রকাশ চেয়ারম্যান ঘটনা অস্বীকার করে বলেন যে, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। হালুয়া ঘাট থানার ওসি বলেছেন যে, “চুরি মামলায় ঝর্ণা বেগমকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছিল।” তবে তাকে থানায় রেখে নির্যাতনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
ঝর্ণা বেগম ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য যদি আমরা এই মুহুর্তে কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা তা নির্ধারনে দ্বিধাগ্রস্থ হই, তবে যুক্তির খাতিরে যে কথাটি প্রকাশ্যেই উপস্থাপিত হয় যে, (১) প্রথমত: পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নতুন কোন বিষয় নয়, যা বারং বার এ ধরনের ঘটনা সংগঠিত হচ্ছে, (২) দ্বিতীয়ত: একজন সাধারণ মাদ্রাসা শিক্ষকের কন্যা যাদের নুন আনতে পান্থা ফুরায় সে কেন প্রভাবশালী একজন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে তাকে উলঙ্গ করে নির্যাতনের অভিযোগ আনবে? এর পিছনে স্বার্থ কি? এতো ক্ষমতা মেয়েটি পেলো কোথায়? মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বলেছিলেন যে, “মাছের রাজা ইলিশ ও দেশের রাজা পুলিশ”। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন বন্ধ করার জন্য ২০১৩ একটি আইন প্রণীত হয়েছে। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা পুলিশ করে না, কারণ তারা মনে করে যে, টিকে থাকার জন্য জনগণের চেয়ে পুলিশকেই সরকারের বেশী প্রয়োজন। এ ধারনা পুলিশ নিজেও পোষন করে, সে কারণেই পুলিশ বর্তমানে সকল প্রকার জবাব দিহিতার উর্দ্ধে। জবাব দিহিতার উর্দ্ধে থাকায় পুলিশের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে গিয়েছে। সম্প্রতি ডিসেম্বর/২০১৭ শেষ সপ্তাহে নারায়নগঞ্জ একজন এ্যাডিশনাল পুলিশ সুপারের সাথে বেয়াদবী বা নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। এ ধরনের অনেক ঘটনাই ঘটেছে যেখানে পুলিশের নিন্মপদস্থ কর্মকর্তারা উর্ধতন কর্মকর্তাদের ডিঙ্গিয়ে চলছে। এর মূল কারণ পোষ্ট পজিশনের চেয়ে সরকার উর্দ্ধতন মহলে কার কতটুকু সখ্যতা রয়েছে। পোষ্ট পজিশন নহে বরং সখ্যতার পরিমাপের উপর নির্ভর করছে ক্ষমতার মাপ কাঠি। আমলারা প্রজাতন্ত্রের বা রাষ্ট্রের কর্মচারী। কর্মচারীরা তাদের কর্তব্য পালনে যেখানে নিরপেক্ষ থাকার কথা সেখানে তারা নির্লজ্জ দলবাজী করে একদিকে তারা নিজেদের অবৈধ বিত্তভৈববের মালিক বনে যাচ্ছে, অন্যদিকে জনগণকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। ফলে প্রতারিত ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারাই যারা সরকারের ব্রান্ডেড সমর্থক নয়। শিক্ষামন্ত্রীর অসহায়ত্ব আতœসমর্পণের বিষয়টি পর্যালোচনা করলেই অনির্বাচিত সরকারের আমলাতন্ত্র কতটুকু বেপরোয়া তা উপলব্দি করা যায়। তিনি বলেছেন, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে তা সহনীয় পর্যায়ে। একজন মন্ত্রী নিজেকে কতটুকু অসহায় মনে করলে তিনি নিজেকে তার অধীনস্থ আমলাদের নিকট আতœসমর্úণ করতে পারেন (!)। প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন যে, “আমরা লুট পাট করেছি, তবে কাজও করেছি।” অর্থ মন্ত্রী বলেছেন, আমাদের এম.পি’রা টাকার বিনিময়ে কাজ করে, তবে এ টাকে আমি ঘুষ বলবো। স্বভাবগতভাবেই রাবিশ বা ইডিয়েট বলা তার মজ্জাগত অভ্যাস। প্রাথমিক শিক্ষা বা অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে দ্বাম্ভিকতা ও মূর্খতা খুজে পাওয়া গেলেও শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য অত্যান্ত একটি সরল সমীকরণ যা আমলা তান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি নির্মল প্রতিচ্ছবি। আমলারা দূর্ণীতির মধ্যমনি। অথচ দূর্নীতিবাজ ধরার দায়িত্বও আমলাদের উপর। আমলাদের বিষয় সম্পত্তি, অর্থ বিত্ত সর্বকিছুই ধরা ছোয়ার বাহিরে। নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধে প্রতি তারা যতটুকু না সচেতন তার চেয়ে তারা বেশী বাকপুটু এবং পাকা পাকা কথা ও জনগণকে জ্ঞান দিতে বেশী অভ্যস্থ।
আরো একটি ভোট বিহীন একতরফা জাতীয় নির্বাচন করার জন্য সরকারের প্রয়োজন আমলাদের। কারণ আমলারা একতরফা নির্বাচনের প্রধান হাতিয়ার। ভোটার উপস্থিত থাকবে না অথচ মিডিয়াতে ভোটের বাক্স ভর্তি হওয়ার প্রচার হতে থাকবে, এখানেই তো আমলাতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারসাজি, যাহাতে সত্যের সাথে কোন সম্পর্ক থাকে না।
লেখক: কলামিষ্ট ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ