ছাত্রদলের প্রতিবাদের মুখে খুলল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তন বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না: খালেদা জিয়া
কিরণ সেখ : বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে বাইরে রাখতে চাইলেই রাখা যাবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্রদলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক ছাত্রসমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এর আগে বিকাল ৪টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনের মূল ফটকে এ সমাবেশ শুরু হয়। ফটকের সামনে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন। বিকাল পৌনে ৪টায় বিএনপি চেয়ারপারসন সমাবেশের উদ্দেশ্যে তার গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা হন, ৪টা ২৫ মিনিটে তিনি সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানের সভাপতিত্বে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা (বিএনপি) নির্বাচনের দল। আমরা নির্বাচন করব। বিএনপিকে বাইরে রাখতে চাইলেই রাখা যাবে না। আমরা নির্বাচন করবো, সেই ব্যবস্থা ছাত্রদলকে করতে হবে। সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, হাসিনার অধীনে নয়। আর সেই নির্বাচন হবে। কারণ সারা পৃথিবী বুঝে গেছে, হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, আর হবেও না।
স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং সচেতন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা যখন মানুষ মারা শুরু করলো, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গেল কোথায়? কত বড় বড় নেতা ছিল, তারা গেল কোথায়? তারা তখন কেউ ছিল না। পালিয়ে গিয়েছিল। তখন সেনারাই রুখে দাঁড়ালো। এবং স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন জিয়াউর রহমান। যুদ্ধের ডাক দিলেন। তার ডাকেই সাড়া দিয়ে ছাত্র-যুবকসহ সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ধন্যবাদ দেব, কারণ তারা আমাদের সাহায্য করেছে। আমাদের লোকদের আশ্রয় দিয়েছে, বন্ধু হিসেবে আমরা সবসময় মনে রাখব। আমরা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালো সম্পর্ক চাই।
আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি, দিয়েছেন জিয়াউর রহমানÑ দাবি করে তিনি বলেন, ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু তাদের বড় নেতাদের সেধেও পাওয়া যায়নি, অন্য নেতাদেরও পাওয়া যায়নি। ওদের কেউ একজন বড় নেতার কাছে গেছেন, যে আপনি শুধু আপনার ভয়েসটা ক্যাসেটে রেকর্ড করে দেন। তাহলে দেশের মানুষ আপনার ডাকে সবাই নেমে পড়বে। কিন্তু সেটাও করেন নাই। জিয়াউর রহমান সেদিন, পরিবার, নিজের কথা চিন্তা না করে, দেশের কথা চিন্তা করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে ডাক দিয়েছিলেন। এবং যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে নিজের দায়িত্বে চলে গিয়েছিলেন। সুতরাং যতই তারা অস্বীকার করুক, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান, এটা ইতিহাসে লেখা হয়ে গেছে।
সরকার পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে মন্তব্য করে বেগম জিয়া বলেন, এই পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এই সেতু যদি জোরাতালি দিয়ে বানায়, সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না! অনেক ঝুঁকি আছে, ওই নদীতে ঝুঁকি আছে।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানেও হাসিনার অত্যাচার শুরু হয়ে গেছে। প্রধান বিচারপতিকে অস্ত্রের জোরে পদত্যাগ করা হয়েছে। এগুলো আল্লাহ দেখছেন, আল্লাহ বিচার করবেন। তারা এত খারাপ করছে যে, বিচার আল্লাহতালার তরফ থেকেই হবে। আমাদের আর কিছু করতে হবে না।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি? কারণ এখনও তাদের মতলবটা ভালো নয়। কিন্তু পদটা খালি রাখা যায় না। অর্থাৎ হাসিনা যা বলবে তাই করতে হবে। না হলে পদত্যাগ, মামলা হবে, ও জেল। কিন্তু এক ব্যক্তির শাসন তো এদেশে চলতে পারে না।
সকালের দিকে ইঞ্জিনির্য়াস ইনস্টিটিউটশনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গেলে সমাবেশস্থলে প্রবেশে বাধা দেয় পুলিশ। জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানায়, রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যবস্থা। সুপ্রিম কোর্ট প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন করছে। সেখানে রাষ্ট্রপতির যোগ দেওয়ার কথা। সমাবেশস্থলে ঢুকতে বাধা পেয়ে দুপুর ১২টা থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চত্বরে অবস্থান নেয় এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী।
দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এক মাস আগে সমাবেশের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। পুলিশও অনুমিত দিয়েছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আবার প্রমাণ হলো এই সরকারের আমলে গণতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।
জঙ্গিদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জঙ্গি সৃষ্টি করা করেছিল? হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সৃষ্টি জঙ্গি। কে ছিল জঙ্গিদের নেতা? শায়েখ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাই। সব তাদের আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গি নয়। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জঙ্গি বানানো হচ্ছে, বানাচ্ছে তারা।
গুম- খুনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে যারা থাকবেন। তাদের বিরুদ্ধে মানুষ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবে। কারণ তারা সব কাজগুলো রাষ্ট্রবিরোধী করছে।
দেশে গণতন্ত্র নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে দেশে জনগণের নির্বাচিত সরকার নেই। যারা ক্ষমতায় আছে তারা হচ্ছে অবৈধ, এরা বৈধ সরকার নয়। কারণ বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। আজকে দেশে আইনের শাসন ও কথা বলার অধিকার নেই- বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যে করেই হোক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। জনগণের যারা কল্যাণ ও ভালো চায় তাদের সরকার জনগণ দেখতে চায়। সেই জন্য মানুষ চায় একটা পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন দেশে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন। কারণ হাসিনার অধিনে যত নির্বাচন দেখেছি, সেই নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়েছে, তা কেউ বলবে না। সুতরাং হাসিনার অধিনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, আর সুষ্ঠুও হবে না কোন দিন। হাসিনার অধীনে দেশ আর কিছু দিন থাকলে দেশ আর থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, হাসিনার সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। তাই তাদের অধিনে নির্বাচন হতে পারে না। আজ সংসদ বলে কিছু নেই। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে এরা ভোট পায়নি। সুতরাং এরা সংসদে থাকার যোগ্য নয়। তাই এই সংসদ ভেঙ্গে দিয়েই নির্বাচন দিতে হবে। এই সংসদ রেখে নির্বাচন হবে না। আর হাসিনার অধিনেও নির্বাচন হবে না।
আজকে এক ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ি দেশে সব কিছু চলছে মন্তব্য করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কারণে আজকে কোন কিছুই চলছে না। দেশ আজ অচল। এই কারণে দেশ সামনের দিকে না গিয়ে পিছনের দিকে যাচ্ছে। আজ মানুষের অবক্ষয় হচ্ছে। এই জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগকে কেউ বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কারণে তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে নাই। কারো না কারো গায়ে পা দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় বসে নাই।
দ্রব্যেমূল্যের বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের লবণ দিয়ে ভাত খাওয়া আজ উপায় নেই।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, শুধু চেহারা, ছবি ও স্লোগান দিলে হবে না। এগুলো আর চলবে না। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করেছে। সবাই পিছনে গোয়েন্দা নিয়োগ করা হয়েছে। বিএনপির নেতাদের পিছনেও গোয়েন্দা নিয়োগ করা হয়েছে।
ছাত্রদলের সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে তিনি বলেন, অনুমতির বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষ মিথ্যাচার করেছে। এই মিথ্যাচার হাসিনা দিয়ে শুরু হয়েছে, আর শেষ হয়েছে সরকারির কর্তকর্তা-কর্মচারিদের দিয়ে। উনা’রা অনুমতি দিয়েছেন, টাকা নিয়েছেন। আর বলছেন, অনুমতি দেইনি।
আমরা অনেক দিন আগে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়েছি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের অনুমতি না দিয়ে অন্য একটি পার্টিকে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বলতে হবে, ৫ তারিখি দিচ্ছি না। আরেক দিন দেবো বা আরেক জায়গায় দেবো। আমরা করবো। আর আমরা শৃঙ্খলা মেনেই চলতে চাই। কিন্তু শৃঙ্খলা ভাঙ্গেই তারা। আর এগুলো করায় পুলিশকে দিয়ে। পুলিশকে তারা প্রতিটি কাজে ব্যবহার করে। পুলিশ খারাপ নয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের খারাপ করছে। পুলিশকে আমরা বলেবো, আপনাদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই, আর আপনাদের ওপর আমাদের কোন রাগও নেই।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, ঐক্য, ইমাম ও শৃঙ্খলা। তিনটি জিনিস অত্যন্ত জরুরি। যেটা আওয়ামী লীগের মধ্যে নাই। আমাদের শুধু স্লোগান দিলেই হবে না। তোমাদের আমি গতবারই বলেছি, তোমাদের স্লোগারে ধারা পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের সমস্যার বিষয় নিয়ে স্লোগান তৈরী করতে হবে।