সেলিব্রিটি দেমাগ ও শেষ পরিণতি
গত অনেক বছর ধরেই শুনে আসছি, অমুক বিখ্যাত বাংলা মুভির নায়িকা এখন ভিক্ষা করে, তমুক নায়ক নেশায় আসক্ত হয়ে গৃহবন্দী, আরেকজন বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে ইত্যাদি। হরহামেশাই আমরা বাংলাদেশের বিনোদন মাধ্যমের এক সময়কার উজ্জ্বল তারকাদের জীবনের শেষ অবস্থার চিত্র এমন দেখতে পাই। কেন?
আমরা যদি তাদের জীবনের প্রথম সময় থেকে পর্যালোচনা করে কারণ বের করতে যাই তাহলে দেখা যাবে, প্রায় সবার জীবনেই বেপরোয়া জীবন যাপনের কারণ ও ঘর বিমুখ জীবন ব্যবস্থা। যৌবনে তারা সবাই মৌবনেই সময় কাটায়, শেষ জীবনের পরিণতি ও শেষ জীবন বলতে চরম সত্য সংকটময় একটি অধ্যায় আছে, সেটা ভুলেই যায়। স্টার নামক পদবি নামের পাশে বসলেই, তাদেরকে আর মাটিতে খুঁজে পাওয়া যায় না, আকাশে বিচরণ করতে থাকে, মাটিতে তাকাবার মতো সময় খুঁজে পায় না। সাধারণ মানুষকে তো মানুষ বলেই মনে করে না, উচ্চবিত্তদের সাথেই মেলামেশার অভ্যেস গড়ে উঠে। তাদের মুখে তখন ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ নামক মূল্যবান কথাটি বেশি শুনা যায়। সাধারণ মানুষ তাদের কাছে গেলে তারা এটাকে বিড়ম্বনা বলতেই সাচ্ছন্দ বোধ করতে শুরু করে। তারা কখনো ভাবে না যে, তারা ব্যবহৃত হচ্ছে, তাদের যৌবন নিয়ে আনন্দ করে একদিন ছোঁড়ে ফেলে দিবে এই উচ্চবিত্তের দল। স্টার হওয়ার পর বেশিরভাগ তারকা জগতের মানুষ নিজের পরিবার থেকেও দূরে সরে যায়, অনেকেই নিজের সংসারকে বিনষ্ট করতে বেশি সময় নেয় না। চাকচিক্যতার মোহে অতীত ভুলে গিয়ে সবকিছুকেই রঙিন দেখতে শুরু করে। উচ্চবিত্তরা নতুন বিকশিত তারা কি শকুনের মতো আষ্টে-পিষ্টে ছোবল মারতে থাকে, একদিন শরীরের সব কিছুই শেষ হয়ে যায়, সমাজের চোখে হয়ে উঠে শুধুমাত্র ব্যবহৃত পুরাতন সামগ্রীর মতো। একদিন যাদের সঙ্গে রংমহল সাজিয়েছিল, তারা ফিরে তাকাবার মতো সময় পায় না, যারা রাত দিন ব্যবহার করেছে, তারাই সমাজের চোখে তিলক টেনে দিয়ে নাম দেয় ‘কলঙ্কিনী’। অতীতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আর পারে না ফিরে যেতে, কারণ তাদের অতীতের ফেলে যাওয়া সব কিছুই হয়ে যায় পর, অস্বীকৃতি জানায় পরিজনেরা, দূরে চলে যায় আপনজন। এভাবেই কারো কারো জায়গা হয় সমাজের নিকৃষ্টতম জায়গা, যেখানে বিক্রি হয় নারীর সম্ভ্রম, কেউ হয় রাস্তার ফকির। এই চিত্র কোনো গল্প নয়, এটি একটি চির বাস্তবতার চিত্র। নিজের চিকিৎসা করার মতো পয়সা থাকে না অনেকেরই, শেষ জীবনে আবার সাধারণ মানুষের কাছেই আসতে হয়, যেখান থেকে জীবন শুরু হয়েছিল। কেউ হয়তো নতুন জীবন ফিরে পায় সাধারণ মানুষের ভালবাসায়, কেউ পারে না। এভাবেই একদিন সমাপ্তি ঘটে আমাদের বিনোদন জগতের কিছু কিছু তারাদের। এর মাঝেও অনেকেই আছেন, যারা অনেক ভালো করছেন। যারা ভালো করছেন, তারা দেমাগ নিয়েই থাকেন, সাধারণ মানুষের কাছে আসার মতো সুযোগ তাদের থাকে না। উপমহাদেশের খুব ব্যস্ত অভিনয় শিল্পী শাহরুখ খানকে এক মেয়ে প্রশ্ন করেছিল, কিভাবে খান এর দেখা পেতে পারবে সহজে, বাদশাহ বলেছিল, আমাকে পেতে বেশি দূর যেতে হবে না, শুধু আমার বাড়ি ‘মান্নত’ এর সামনে এসে গেয়ে উঠবে ‘ঞঁ কধযধধহ, ুবয নধধঃধহ রং হধংযরষর ৎধধঃসব, সধহব হধ সবৎধ ফরষ ফববধিহধ’
দেখবে আমি তোমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা সব কিছুই কপি করি, কপি করতে পারি না শুধু ভালো দিকগুলো, পারি না এমন কিছু করতে যেন, মানুষের মাঝে স্মরণীয় থাকতে পারি।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন