লোকাল সিন্ডিকেট বাজার দর বাড়াচ্ছে
মাথাপিছু আয় সবারই বেড়েছে। মানুষের আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং বাজার খরচও বেড়েছে। পেঁয়াজ ৯০ টাকা আর চালে ৬০ টাকা গুনতে হচ্ছে। ফলে বর্ধিত আয় মানুষের কোনো কাজেই আসেনি। গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও বাড়িয়েছে সরকার। নিম্নবিত্তের আয় ততটা বাড়েনি। তাদের যাপিত জীবন অসহনীয়। চাল কিনে খাওয়া তাদের পক্ষে দুঃসাধ্য সাধন। মাঝে মাঝে খোলা জিপে করে সরকারি মোটা চাউল বিক্রয় করতে দেখা যায়। এই উদ্যোগ আরও বাড়ানো দরকার। তাহলে নিম্নবিত্তরা কিছুটা স্বস্তি পাবে। চালের মূল্যটা সরকারকে সব সময় একটা সহনীয় মাত্রায় রাখতে হবে। আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, সরকার চেয়েছে চালের দাম বাড়–ক। যাতে কৃষকেরা কিছুটা লাভবান হতে পারে। অর্থমন্ত্রী হয়তো জানেন না যে, চালের মূল্য বাড়ানো হলে এতে কৃষকের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা থাকে না। কারণ, কৃষক বিক্রি করে ধান। সেই ধান ব্যবসায়ীরা কিনে চাল বানায়। তারপর চাল বাজারে যায়। তাই বাজারে চালের দাম বাড়লে, কৃষকের তাতে কোনো অংশগ্রহণ নেই। চালের দাম বাড়লে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীগণ লাভবান হয়। বন্যাতে যতটা লোকসান হয়েছে তার চেয়ে বেশি ইমপোর্ট করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দেখা গেছে চালের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। রোহিঙ্গাদের জন্য চালের মূল্য বেড়েছে বলে মনে করি না। কারণ, তাদের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য পাওয়া গেছে। চালের মূল্য বেড়েছে বন্যার কারণে। বন্যায় সব ধানের জমি ডুবে যাওয়ায়, চাল বাইরের দেশ থেকে কিনতে হয়েছে। এর ফলে বাজারে চালের মূল্য ২০ টাকা বেড়ে গেছে। বেড়েছে ডাল, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের দাম। শীতকালীন সবজির দামও বেড়েছে। বেড়েছে রিক্সা ভাড়া। তাই বলা যায়, আমরা বেঁচে আছি, এই বেঁচে থাকার জন্যও আমাদেরকে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। আমাদের যে টাকায় চাল কেনার কথা ছিল, তার থেকে বেশি দর হওয়ার কারণ ইমপোর্ট কস্ট বেশি ছিল। আমাদের লোকাল সিন্ডিকেট আছে। তারাও বাজার দর বাড়াচ্ছে। যারা উচ্চ মধ্যবিত্ত তাদের কোনো দিক দিয়েই অসুবিধা হচ্ছে না। নিম্ন মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তদের বেশি অসুবিধা হয়েছে। ওপেন মার্কেট সেল বেশি করে করা উচিত। সরকারের একটা নির্দিষ্ট বিক্রয় মার্জিন রয়েছে। তারপরেও ব্যবসায়ীরা সেটা মানছে না। ম্যাজিষ্ট্রেটরা ভ্রাম্যমান আদালত চালিয়ে জরিমানাও করছেন। তবুও বাজার দর কমছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোপূর্বে কোনো সরকারই পারেনি। এই সরকারও পারছে না।
পরিচিতি : অর্থনীতিবিদ
মতামত গ্রহণ : সানিম আহমেদ/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ