বিনা কারণে কোনো নাগরিককে একদিন জেলে রাখাও সংবিধান সমর্থন করে না ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে শুনানিতে আপিল বিভাগ
এস এম নূর মোহাম্মদ : নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল কোর্ট) আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত ২০০৯ সালের আইনের ১৪টি ধারা ও উপধারা অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার দায়িত্বে থাকা প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।
শুনানির শুরুতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্টের সাজা দেওয়া প্রসঙ্গে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, পুলিশ থাকতে পারবে না, জেল-জরিমানা দিয়ে দিবেন। সাধারণ মানুষের কথা কি বলবো, আমার নিজেরই ভয় লাগে। বিনা কারণে কোনো নাগরিককে একদিন জেলে রাখাও সংবিধান সমর্থন করে না।
দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি বলেন, আগের মানুষ আর নাই। তখনকার মানুষের একটা চরিত্র ছিল। এখন কোনো একটা চাকরির জন্য চারিত্রিক সনদ নিতে গেলেও চেয়ারম্যান সাহেবরা টাকা নেন। টাকা খেয়ে সালিশে কথা বলেন। আগে তো ২৫-৩০ বছর একজনই চেয়ারম্যান থাকতেন, কোনো অভিযোগ শোনা যেত না। এখন মানুষ বাড়ছে। কিন্তু ম্যান অব কোয়ালিটি কমছে।
এসময় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রবীন্দ্রনাথের ‘বঙ্গমাতা’ কবিতা থেকে উদ্বৃত করে বলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী/ রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি।’ এসময় বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে উদ্দেশ করে বলেন, এখন তো মানুষের ইন্টিগ্রিটি নষ্ট হয়ে গেছে। মোবাইল কোর্ট নিয়ে মানুষের মনে আতঙ্ক আছে। ঘটনাস্থলেই সাজা দিয়ে দিচ্ছেন, অথচ তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিচ্ছেন না। জোর করেও তো স্বীকারোক্তি আদায় করা যায়। তখন আমীর-উল ইসলাম বলেন, এটা তো ভালো বিষয়। আপনার দর্শন আর আমার দর্শনে পার্থক্য আছে।
এসময় বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, এটাকে ভালো বলছেন? দ-বিধির এতগুলো ধারা আপনি অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন আবার আপনিই বলছেন, এটা আদালত না প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এটা তো আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের বুঝাতে হবে তো। খুবই সেনসেটিভ বিষয়। আমাদের তো রায় লিখতে হবে। একটা লোককে ২ বছরের জেল দিয়ে দিবেন তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগই দিচ্ছেন না। তার সুযোগটা কোথায়? হ্যাঁ, কিছু কিছু আইন আছে যেখানে মোবাইল কোর্ট থাকতেই হবে। কিন্তু সাক্ষ্য আইনের সব শিডিউল যদি নিয়ে নেন তাহলে এটা কি হবে? পরে আদালত আগামী মঙ্গলবার এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।