লজ্জা ঈমানের অঙ্গ গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে লজ্জার অনুভূতি। হযরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া যখন আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ইবলিশের চক্রান্তে পা দিয়েছিলেন, তখন সর্বপ্রথম তাদের দেহ থেকে পোশাক নামক আবরণটি খুলে গিয়েছিল। অর্থাৎ শাস্তি স্বরূপ প্রথম বেহেশতের পোশকই হরণ করা হলো এবং তাদেরকে লজ্জার পরীক্ষায় নিক্ষেপ করা হলো।
লজ্জাকে দুভাগে ভাগ করা যায়, ১. বাহ্যিক লজ্জা ২. অন্তরের লজ্জা। প্রথমে অন্তরের লজ্জা প্রসঙ্গে। হযরত আদম (আ.) অপরাধের কারণে খুঁবই লজ্জিত হয়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। মানব জাতির জন্য এই দোয়া শিক্ষা দিলেন “রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ওয়া ইনলাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরীন”। লজ্জার অনুভূতি যখন ভোঁতা হয়ে যায়, তখনই মানুষ অমানুষ হয়ে যায়। সামাজিক লোক লজ্জার ভয়ই তখন তাদের থাকে না। যার কারণে আমাদের সমাজে সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ, জেনা, ব্যভিচার, ধর্ষন, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি, যৌতুক প্রথা এবং নারী নির্যাতনের মত মারাত্মক পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ি আমরা। এই ঘৃনিত কাজগুলো শুধু আইনের মাধ্যমে উচ্ছেদ সম্ভব নয়। অবশ্যই এজন্য লজ্জা নামক আন্তরিক ভূষণের একান্ত প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত বাহ্যিক লজ্জা অর্থাৎ শারীরিক আবরণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে “হে নবী! মুমিন পুরুষদের বলে দিন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করে। এই পন্থাই তাদের জন্য উত্তম” আর “হে নবী! মুমিন নারীদের বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও লজ্জা স্থানের হেফাজত করে। আর তাদের সাজসজ্জা যেন প্রকাশ না করে। যা আপনা আপনি প্রকাশ হয়ে পড়ে তা ছাড়া, আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে। তারা যেন তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে, তবে এই সব লোক ছাড়া-স্বামী, পিতা, স্বামীর পিতা, নিজের পুত্র, নিজের মেলামেশার স্ত্রী লোক, নিজের মালিকানাধীনের অধীনস্থ পুরুষ। যাদের অন্যরকম উদ্দেশ্য নেই এবং শিশুদের যে সব শিশু মেয়েদের গোপন বিষয়ে এখনো অজ্ঞ। তারা যেন যে সৌন্দর্য তারা লুকিয়ে রেখেছে তা লোকদের সামনে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সজোরে পা না ফেলে। (সুরা আন-নূর, ৩০-৩১) উপরোক্ত আয়াতে আমরা দেখতে পাই, নারী পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টি সংযত রাখার প্রাথমিক হুকুম দিয়ে তারপরই লজ্জা স্থানের হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুরুষদের ব্যাপারে নিজের স্ত্রী ও মুহাররাম নারী ব্যতিত অন্য কোন নারীকে নয়ন ভরে দেখা সম্পূর্ন না জায়েয। হঠাৎ দৃষ্টি পড়লে সেটা ক্ষমার যোগ্য কিন্তু পুনরায় ভালভাবে দেখার উদ্দেশ্যে দৃষ্টি দেওয়া চোখের জিনা, ফুসলানো কন্ঠের জিনা, তৃপ্তির সাথে শ্রবন করা কানের জিনা, হাত লাগানো ও অবৈধ উদ্দেশ্য নিয়ে চলা হাত ও পায়ের জিনা,,ব্যভিচারের এ জাতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি চলতে থাকে, তখন লজ্জাস্থান গুলো তাকে পূর্নতা দান করে। (বোখারী, মুসলিম ও আবু দাউদ শরীফ)