হাদীস মানার প্রয়োজনীয়তা
মোস্তফা ওয়াদুদ
হাদীসে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইসলামের দ্বিতীয় উৎস বা দলীল। পবিত্র ওহী আল কুরআনে কোনো সমাধান না পেলে হাদীসে তালাশের জন্য বলেছেন প্রিয় নবী সা.। মানবজীবনে হাদীসের গুরুত্ব এত বেশি যে তা নিয়ে আলাদা করে আলোচনা করা বাহ্যত নিষ্প্রয়োজনীয়। কুরআনুল কারীমের অনেক নির্দেশ, রাসূলুল্লাহ সা. এর অগণিত আদেশ ও সাহাবীগণের কর্ম-পদ্ধতি দ্বারা প্রমাণিত যে হাদীসের গুরুত্ব মানবজীবনে অপরিসীম। যার ফলশ্রুতিতে সাহাবীগণের যুগ থেকে শুরু করে সকল যুগে হাদীস শিক্ষা, সংকলন, ব্যাখ্যা এবং হাদীসের আলোকে মানব জীবন পরিচালিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এভাবে গড়ে উঠেছে হাদীস বিষয়ক সুবিশাল জ্ঞান-ভান্ডার। রচনা হয়েছে হাজার হাজার গ্রন্থ। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে লাখ লাখ মাদরাসা। যেখানে দেয়া হয় হাদীসের দরস। প্রাচীণকাল থেকে অধ্যাবধি পর্যন্ত এটা সবাই অকাট্যভাবে মেনে নিয়েছে যে মানবজীবনকে সুন্দররুপে পরিচালনায় হাদীসের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
তবে কতিপয় ইহুদী-খ্রিষ্টান ‘প্রাচ্যবিদ’ পন্ডিত ও মুসলিম উম্মাহর কোনো কোনো ‘পন্ডিত’ বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্নভাবে হাদীসের গুরুত্ব অস্বীকার করতে চেষ্টা করেছেন। তাঁদের দাবীর বিপক্ষে রয়েছে অসংখ্য জবাব। হাদীস বাদ দিলে আর কোনোভাবেই কুরআন মানা বা ইসলাম পালন করা যায় না। হাদীসের বিরুদ্ধে এ সকল মানুষের উত্থাপিত যুক্তিগুলোর মধ্যে প্রথম যুক্তিটি আমরা আলোচনা করতে পারি। আমরা দেখতে পাব যে, কুরআন মানতে হলে হাদীস মানা আবশ্যক। নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ্য করলেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে। হাদীসের উপর নির্ভর না করলে ‘কুরআন’-এর পরিচয় লাভ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবন, পরিচয়, বিশ্বস্ততা, সততা, নবুয়ত ইত্যাদি কোনো তথ্যই হাদীসের মাধ্যম ছাড়া জানা সম্ভব নয়। তিনি কিভাবে কুরআন লাভ করলেন, শিক্ষা দিলেন, সংকলন করলেন ইত্যাদি কোনো কিছুই হাদীসের তথ্যাদি ছাড়া জানা সম্ভব নয়। কুরআন কারীমে কিছু নির্দেশ বাহ্যত পরস্পর বিরোধী। যেমন কোথাও মদ, জুয়া ইত্যাদিকে বৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কোথাও তা অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও কাফির ও অবিশ্বাসীদের সাথে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং কোথাও সকল প্রকার বিরোধিতা ও যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাদীসের নির্দেশনা ছাড়া এ সকল নির্দেশের কোনটি আগে, কোনটি পরে এবং কিভাবে সেগুলো পালন করতে হবে তা জানা যায় না। এজন্য হাদীস বাদ দিলে এ সকল আয়াতের ইচ্ছামত ও মনগড়া ব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা খুবই সহজ হয়ে যায়। মূলত এজন্যই ইহুদী, খ্রিষ্টান, কাদিয়ানী, প্রমুখ সম্প্রদায় হাদীসের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অপপ্রচার চালান। তাঁদের উদ্দেশ্য মুসলিম উম্মাহকে কুরআন ও ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া। তাঁরাও জানেন যে, হাদীসের সাহায্য ছাড়া কোনোভাবেই কুরআন মানা যায় না। শুধুমাত্র সরলপ্রাণ মুসলিমকে ধোঁকা দেয়ার জন্যই তারা মূলত কুরআনের নাম নেন। কুরআনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আনুগত্য ছাড়াও তাঁকে অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, এতে আল্লাহ তোমাদিগকে ভালবাসবেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করবেন।’’ (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত-৩১) শিক্ষার্থী : দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত।