মার্চে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাচ্ছে বাংলাদেশ
জাফর আহমদ : সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী মার্চে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্থা ইকোসক এ মর্যাদা দেবে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যে সব শর্ত পরিপালন করতে হয় তা ইতোমধ্যে করেছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে মাথাপিছু আয় হতে হবে ১,২৩০ ডলার, বাংলাদেশের মাধাপিছু আয় ১,৬১০ ডলার। মানব সম্পদ সূচকে স্কোর থাকতে হবে ৬৬। বাংলাদেশের বর্তমান স্কোর ৭২ দশমিক ৮। এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরগুরতা সূচকের স্কোর হতে হবে ২৫ বা তার কম। বাংলাদেশের স্কোর এখন ২৫।
মার্চে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলেও তা বিলম্বে প্রাপ্তি বলে মনে করছে অর্থনীতিবিদরা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ইতোমধ্যে এ সুবিধা পেয়েছে। তাদের মতে, এই প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে একদিকে স্বল্পোন্নত দেশের বাজার ও কম সুদের বহিঃঋণের সুবিধা হারাবে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং ২০২১ সালের মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে তার পথ সুগম হবে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলেও নিম্ন মধ্যআয়ের সীমানার মধ্যেই আটকে থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘ইকোসক’ বাংলাদেশের এ সব সূচক নিরুপণ করবে। যদি তা ‘আপ টু মার্ক’ হয় তাহলে বাংলাদেশ সে মর্যাদা পাবে। এবং পুরোপুরি কার্যকর করার জন্য তিন বছর সময় পাবে বাংলাদেশ।
উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে যে তিন শর্তের কথা আমরা বিবেচনা করি ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছি বলে মনে করেন পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রায় ১৯০টি দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ আর দক্ষিণ এশিয়ার শুধু বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের গন্ডি পেরুতে পারেনি। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সাল থেকে এই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় আছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এ মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। যে সব দেশ এ মর্যাদা পেয়েছে তারা সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করেছে। পাশাপাশি সামাজিক রুপান্তরের কাজগুলো করেছে। এই কাজগুলো যদি আমরা না পারি বা দ্রুততার সঙ্গে করতে না পারি তাহলে উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পাচ্ছি বা নিম্নমধ্য আয়ের যে মর্যাদা পেয়েছি তা থেকে পিছিয়ে যাবো। অনেক দেশ আছে উন্নয়নশীল দেশ আছে স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল হওয়ার পর আর এগুতে পারেনি। বাংলাদেশও যাতে এমন অবস্থায় পতিত না হয় সে জন্য সর্বত্রভাবে মনোযোগ রাখতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলে দুই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। প্রথমত-স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে যে সব সুবিধা পাচ্ছে তা হারাতে হতে পারে। দ্বিতীয়ত-কম সুদে যে সব বহিঃঋণ পেয়ে থাকি সেগুলোর সুদ হার বাড়বে। নিম্নমধ্য আয়ের দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে তার কিছুটা মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আগামীতে তা আরও প্রবল হবে।
্এ সব চ্যালেঞ্জ আসবে তা উৎরানোর জন্য বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, এ জন্য বাংলাদেশের যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এবং সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তার গতি ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে সুবিধা আদায়ের জন্য সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান ইউরোপের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, তখন হয়তো জিএসপি-প্লাস সুবিধা পাবে।
উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন করা ও সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি যে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে উত্তরণের কাজ আরও দ্রুত করতে হবে বলে মনে করেন সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। বর্তমান ১,৬১০ ডলারের মাথা পিছু আয় আছে তা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।