ইসরায়েল শুধু ফিলিস্তিনি বন্দীদের জন্যে মৃত্যুদ- বিবেচনা করছে
রাশিদ রিয়াজ : ইসরায়েল সংসদে ইতিমধ্যে মৃত্যুদ- নিয়ে একটি বিল আলোচনার জন্যে উত্থাপন করা হয়েছে। দেশটির একটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান শিন বেত ইসরায়েলি মন্ত্রীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, মৃত্যু- চালু করা হলে সারা বিশ্বে ইহুদিদের অপহরণের মাত্রা বাড়তে পারে। এরপরও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মৃত্যুদ- বিধি বিলটি সংসদে ভোটাভুটির জন্যে তুলেছেন।
ইসরায়েল সংসদে বিলটির পক্ষে ৫২ ও বিপক্ষে ৪৯ ভোট পড়লেও আইনে পরিণত হওয়ার আগে এটি আরো দু’বার বিবেচনায় আনতে হবে। তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু বলছে, এ বিলটির লক্ষ্যই হচ্ছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ রুখে দেওয়া। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যান বলেছেন, ইসরায়েলি সেনা ও সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এ আইন বলবৎ হবে। গত বছর এক বিক্ষোভে তিন জন ইসরায়েলি পুলিশ অফিসার মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হত্যাকারীদের ‘রক্তমাখা হাত ওয়ালা সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেন। ইসরায়েল পশ্চিম তীর পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ও ভূমি বেদখল করে নেওয়ার সময় সামরিক আদালত ও নিবর্তনমূলক আইন ব্যবহার করে। এর ফলে ইসরায়েলিদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। তবে ইসরায়েলিদের গুলিতে অহরহ ফিলিস্তিনিরা মারা পড়লেও সেক্ষেত্রে এই মৃত্যুদ- আইন প্রযোজ্য হবে না।
কার্যত মৃত্যুদ- কার্যকরের ব্যাপারে ইসরায়েলের সংবিধানে যে ঘাটতি ছিল তা পূরণ করার জন্যেই এধরনের আইন করা হচ্ছে বলে মনে করছেন ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ দালেহ। তিনি এও বলেন, সম্প্রসারণবাদি নীতির অংশ হিসেবেই ইসরায়েল মৃত্যুদ- নিয়ে আইন করতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইনজীবী ইয়াসের আল-আমরি বলেন, প্রস্তাবিত ইসরায়েলি এই আইনটি আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। কারণ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব অপরাধমূলক নয় বরং তা জাতীয়তাবাদ ধরনের। চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ইসরায়েল তাই ফিলিস্তিনিদের জন্যে মৃত্যুদ-ের বিধান করতে পারে না।
মিডিল ইস্ট মনিটরের সিনিয়র এডিটর ইব্রাহিম হিউয়েট বলেন,ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও ঘৃণা করে আসছে, সর্বশেষ মৃত্যুদ- বিধি নিয়ে এসে দেশটি প্রমাণ করেছে যে বর্ণবিদ্বেষের অপরাধে রাষ্ট্রটি দোষী সাব্যস্ত ও বিলটি সেই সত্যকে তুলে ধরেছে। তবে নেতানিয়াহু বলছেন, যে ব্যক্তি হত্যা করবে ও হাসবে তাকে মৃত্যুদ- দেওয়আই উচিত। শিন বেতের প্রধান নাদাভ আর্গাম্যান বলছেন, সংসদের ভেতরে নিরাপত্তা ক্যাবিনেটে তারা এই বিলের বিরোধিতা করবেন। তিনি বলেন, ইহুদিরা শুধু মুসলিম দেশেই নয়, তারা পশ্চিমের দেশগুলোতেও বাস করে। সেসব দেশে ইহুদিদের উপর এই বিল হুমকি সৃষ্টি করবে।
এদিকে ইসরায়েলি মিডিয়া হারেৎজ বলছে, এ্যাটর্নি জেনারেল আবিচায় ম্যান্ডেলব্লিট ব্যক্তিগত এক সংলাপে বলেছেন, তিনি এই মৃত্যুদ-ের বিলের ব্যাপারে ক্যাবিনেটের মন মেনে নিতে বাধ্য নন। এর আগেও তিনি প্রধান সামরিক বিচারক হিসেবেও মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা করেছিলেন এবং এখনো সে অবস্থান পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে ইসরায়েলের সামরিক আইনে কেউ হত্যার কথা স্বীকার করার পরও বিচারকদের সর্বসম্মতি পেলেই মৃত্যুদ- দেওয়ার বিধি রয়েছে। তবে নতুন এ বিলে একজন সাধারণ বিচারকের মত পেলেই মৃত্যুদ- দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। চূড়ান্ত মৃত্যুদ- দেওয়ার পর বিলে উদারতের বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।