বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ‘দায়’ কী শেখ হাসিনার?
মানুষ ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ভুল থেকে শিক্ষা নেয় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে বিএনপি ওই দিনটিকে আবার ফিরে পেতে চায়। এজন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শুক্রবার এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বিশ্ব দেখল, ব্যালট নয়, বুলেটই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার উৎস। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুখে একথা মানায়? কোন নির্বাচনটি আওয়ামী লীগ প্রত্যাখান করেছে? আর বিএনপি? ১৯৮৬ আর ২০১৪ সালের কথা তো এর বড় প্রমাণ। সামনে বিপদ না হাজির হলে ব্যালট তো বিএনপি কখনোই পছন্দ করেনি। খালেদা জিয়া বার্তায় আরও বলেন, ৫ জানুয়ারির ‘ভোটারবিহীন কলঙ্কিত নির্বাচন’ বাংলাদেশিদের ভোটাধিকারের ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রতি করুণ পরিহাস ও আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পিঠে ছুরিকাঘাত। জনগণই তাদের সরকার গড়বে, চক্রান্তকারীরা না।’ ঐতিহাসিক সংগ্রামের ইতিহাস তো কেবল আওয়ামী লীগেরই আছে, বিএনপির নেই। দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করে বিশ্বনন্দিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৎ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার নামও আলোচিত হয়েছে। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র আশঙ্কা গুঁড়িয়ে বাংলাদেশ যে বিস্ময়কর উত্থানের ভূখ- হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে, তার দিনক্ষণ কখন শুরু হয়েছে তা এদেশের মানুষ কী জানেনা? সেটা শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। যারা ঢাকা শহরের অট্টালিকায় বসে কিংবা এসি কক্ষে বসে টেলিভিশনের সামনে ইন্টারভিউতে মাথা ঝাঁকিয়ে রাজনীতির নানারকম ব্যাখ্যা দেন; তারা গ্রামের মানুষের বর্তমান বাস্তবতা বা বাস্তব জীবন সম্পর্কে কতটুকু অবগত বা আদৌ অবহিত কী? আমি গ্রামে গেছি, প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে দেখা হয়; কথা হয়। সত্যিকার অর্থেই গ্রামের মানুষের জীবন বদলে গেছে। মোবাইল ফোনসহ হাতে ধূমায়িত চায়ের পেয়ালাতে চুমুক দিতে দিতে রাজনীতির ভালো-মন্দ নিয়ে কথা বলেন। একাদশ নির্বাচনের কথা বলেন। তাদের কণ্ঠে হতাশ শুনি না, আশাবাদী উচ্চারণ শুনি। শতভাগ মানুষ জুতা পায়ে হাঁটেন। অধিকাংশ বাড়ি টিন, পাকাও দেখা যায়। গ্রামে টেলিভিশনসহ আধুনিক জীবনের সব উপকরণই আছে। সেখানে ডিশ আছে। সর্বাধুনিক মোবাইলও দেখা যায় কারো কারো হাতে। ঢাকায় যারা গণমাধ্যমের সামনে সরকারের সংকট নিয়ে আলোচনা করে নিজেরা পেরেশান হন এর বিন্দুমাত্রও সেখানে শুনি না। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বাংলাদেশ ঘুরে গিয়ে লিখেছেন, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে বাংলাদেশ অবশিষ্ট বিশ্বের কাছে রোল মডেল হতে পারে। এটা শেখ হাসিনার সমালোচকদের খুঁজে পড়তে বলছি। বিশ^ ব্যাংক তো নিজেরাই অনিয়ম দুর্র্নীতি করে। এই সত্য কী অস্বীকার করা যায়? তারা পদ্মাসেতু নিয়ে কী না নাটক করেছে। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কীভাবে যাওয়া যায়Ñ বিতর্কিত করা যায়, দুর্নীতিবাজ বানানো যায় এর কী কম চেষ্টা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংককে অগ্রাহ্য করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার যে অনন্য সাধারণ উদ্যাগ বঙ্গবন্ধু কন্যা নিয়েছিলেন, পদ্মায় তার অবয়ব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। ইউনেসকো-স্বীকৃত ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্বীকৃতি দিল। প্রামাণ্য দলিল এটি। কিন্তু খালেদা জিয়া ধন্যবাদও দিলেন না। বিএনপি সরকার আমলে এই ভাষণ বাজানো হলে মাইক কেড়ে নেওয়া হতো। বেগম খালেদা জিয়াও তা বাজাতে দেননি। জনসভা করতে দেননি, আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড মেরেছে কারা কা বের করার দায়িত্ব তার ছিল। কারণ, তিনি প্রধানমন্ত্রী তখন। কিন্তু উল্টো দায় চাগালেন আওয়ামী লীগের ওপর। কারণ, দলটির কয়েকজন নেতা ফেঁসে যাচ্ছেন। তাই তাদের মুখে আওয়ামী লীগের নিন্দা সাজে না। যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী সঙ্গ এখনো ছাড়েনি বিএনপি। আদালত থেকে বলা হয়েছে, তারা সন্ত্রাসী সংগঠন। অথচ এই সেদিনও তো মির্জা ফখরুল বলেছেন, জামায়াত তাদের সঙ্গে থাকবে। তার মানে কী মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচন? ২০১৩ সালের শেষ দিকের সময় কত কঠিন ও অনিশ্চিত ছিল তা অনেকেই স্বীকার করবেন। সুতরাং বিএনপির মেতা দলকে বাদ না দিয়ে গণতন্ত্রের স্বার্থে চেষ্টা চালানো হয়। খালেদার মন গলেনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে কোকোর মৃত্যুর পরে শোক প্রকাশ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিব্রত হলেন। এরপরও তাকে আলোচনায় বসতে টেলিফোন করেছিলেন শেখ হাসিনা। এর জবাবে খালেদা জিয়ার ঝাড়ি। কি না কঠিন সময় গেছে তখন। এক নিশ্চিত জীবন মানুষের রাজনীতির অনিশ্চিত গন্তব্য ছিল তখন। প্রধানমন্ত্রী তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ ৫টি মন্ত্রণালয় দিতেও প্রস্তুত ছিলেন। বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও তারা নির্বাচন বয়কট করলে তার দায়ও কী আওয়ামী লীগের? একাদশ সংসদ নির্বাচনে আনার দায় বা নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণের দায় আওয়ামী লীগকে কেন নিতে হবে?
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গল্পকার
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ