ন্যায় বিচার না পেলে মরেও শান্তি পাব না : বাবা নুরুল ইসলাম ফেলানী হত্যার ৭ বছর
অনিরুদ্ধ রেজা, কুড়িগ্রাম : কিশোরী ফেলানী হত্যাকা-ের ৭ বছর পূর্ণ হবে আজ ৭ জানুয়ারি। ২০১১ সালের ওই দিনে ফুলবাড়ীর উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাটাতার ডিঙিয়ে বাবার সাথে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে। ফেলানী নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম ও জাহানারা বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান।
গতকাল শনিবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে মা জাহানারা বেগম নিজের আঁচল দিয়ে পরিষ্কার করছেন মেয়ে ফেলানীর কবর। প্রতিবছরের ন্যায় মেয়ের আত্মার শান্তি কামনায় অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ মাহফিল ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ। ইতোমধ্যে এ অনুষ্ঠান পালনে ৩ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে বিজিবি।
এ সময় ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও মেয়ে হারানোর কষ্ট আজও ভুলেনি। তারা চোখের সামনে আমার মেয়েটাকে পাখির মতো গুলি করে মেরেছে। এ দৃশ্য কখনো মন থেকে মুছে যাবে না। এ হত্যার ন্যায় বিচার না পেলে মরেও শান্তি পাব না। তাই সরকার ও মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।
নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক শামসুদ্দীন জানান, গত বছরের মতো এবারও আজ বিকাল ৩টায় আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমাজকর্মীদের নিয়ে বিশ্বব্যাপি ফেলানী দিবস পালন, ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি, ফেলানীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তের নাম ফেলানী সীমান্ত নামকরণ, ঢাকার গুলশান-১ গোলচত্ত্বর থেকে তেজগাঁও রাস্তার নাম ফেলানী স্মরণী, সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বন্ধের দাবিতে মুক্ত আলোচনার।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলার বিএসএফ’র ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারকার্য শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায় বিচারের আশায় পত্র দেন। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়। ২০১৫ সালের ২ জুলাই সেনাবাহিনীর কোর্ট মার্শালের সমতুল্য বিএসএফের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট আগের রায় বহাল রাখে।
ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, কুড়িগ্রাম জেলা জজকোর্ট পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, আগামী ১৮ জানুয়ারি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার শুনানি রয়েছে। যেহেতু অভিযুক্ত অমিয় ঘোষ আত্মস্বীকৃত, কাজেই তার বিরুদ্ধে আইনগত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবে ভারতীয় উচ্চ আদালত। এ বিষয়ে আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।