পিএলআইড : পরিবেশ এবং লাইফ স্টাইল যেখানে জীবন কেড়ে নিচ্ছে
আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মস্তিষ্ক (ইৎধরহ) এবং স্পাইনাল কর্ড (ঝঢ়রহধষ পড়ৎফ) এক সাথে এদেরকে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বলা থাকে। এই নার্ভাস সিস্টেম মানুষের শরীরের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু আমাদের পরিবেশ এবং লাইফ স্টাইল তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে। আমাদের সমাজে কায়িক শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। উন্নত বিশ্বে হালকা ও ভারী কাজগুলো সাধারণত যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন কররা হয়। কিন্তু আমাদের কৃষিভিত্তিক সমাজে বেশিরভাগ কাজই এখনো মানুষের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের মাধ্যমে সম্পন্ন থাকে। তাছাড়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মানুষ এখন দিনরাত ঘরে বাহিরে কাজ করছে। ফলে বাড়ছে মানুষের এক স্থান অন্য স্থানে যাতায়াতের পরিমাণ। কিন্তু আমাদের চলাফেরার যানবাহনগুলো একেবারেই স্বাস্থ্যবান্ধব নয়। রাস্তায় যানবাহন নেই, যেগুলোতে ঝাঁকুনি কম লাগে। গাড়ির সিটগুলো সেই ঝাঁকুনি শোষণ করে নিতে পারে। ফলে গাড়ির এই অসহনীয় ঝাঁকুনি সরাসরি মানুষের কোমড়ে আঘাত করছে। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি রাস্তার অবস্থা এতটাই শোচনীয় যেখানে বছরের প্রায় বারো মাসই নানা খানা খন্দে ভরা থাকে। সেই সাথে এমন কোনো রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেটিতে মানুষের স্পাইনের মহাশত্রু উঁচু স্পিড ব্যাকার ছাড়া তৈরি করা হয়েছে। এই সকল কারণের পাশাপাশি আমাদের সমাজেই প্রায় প্রতিটি রোগীই র্দীঘ সময় রোগকে অবহেলা করতে করতে একসময় প্রলাপসড লাম্বার ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক বা পিএলআইডি চিকিৎসার আওয়াতার বাহিরে চলে যায়। প্রায় প্রতিটি মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময় কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন। কোমর ব্যথা অনেক কারণে থাকে। কিন্তু র্দীঘদিন কোমরে ব্যথার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো প্রলাপসড লাম্বার ইন্টার ডিস্ক বা ভার্টিব্রাল পিএলআইডি। এ রোগে কোমরের নরম ডিস্ক, যা দুইটি কশেরুকার মধ্যে থাকে, তা বের বাইরে চলে আসে। এই ডিস্কগুলো আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ স্পাইনকে সবসময় প্রোটেকশন দিয়ে থাকে। ডিস্কের বাইরের দিকে এনুলাস ফাইব্রোসাস নামে একটা শক্ত আবরণ থাকে, যা ক্রমাগত ঘর্ষণ, আঘাত কিংবা ক্ষয় ছিঁড়ে গিয়ে ভেতরের নরম জেলির মতো অংশ, যা নিউকিয়াস পাল্পোসাস নামে পরিচিত, তা বাহিরে বের আসে। সেই বের হওয়া অংশ নার্ভের রুট চাপ দেয়। এর ফলে কোমরে প্রচ- ব্যথা হয় এবং সেই ব্যথা পায়ে এমন কী পায়ের আঙুলে পর্যন্ত রেডিয়েশন হয়। রোগী এই ব্যথাকে অবজ্ঞা করতে করতে এক পর্যায়ে স্পাইন ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তখন রোগীর প্র¯্রাব-পায়খানা বন্ধ যায়, যৌন ক্ষমতার নার্ভ নষ্ট রোগী যৌন ক্রিয়ায় অক্ষম যায়। চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে রোগী আস্তে আস্তে প্যারালাইসিস যায়। রোগী সারা জীবনের জন্য অক্ষম পরনির্ভশীল পড়ে। প্রলাপসড লাম্বার ইন্টার ডিস্ক বা ভার্টিব্রাল পিএলআইডি রোগের মেডিকেল চিকিৎসার খুব একটা আশাব্যঞ্জক চিকিৎসা নেই। তাই কেবল সতর্কতা এবং লাইফ স্টাইল মডিফেকেশনের বিকল্প কিছু নেই। সেই সাথে ব্যক পেইন, কোমর ব্যথাকে অবজ্ঞা না করে যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যথাসম্ভব চিকিৎসকের শিখিয়ে দেওয়া নিয়ম-কানুনের মধ্যে চলাফেরার করার চেষ্টা করলে বহুলাংশে দীর্ঘ মেয়াদী সুফল পাওয়া যায়।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ