সন্ধ্যা নামতেই পিঠার দোকানে দীর্ঘ লাইন
মোরশেদ মুকুল : চলছে শৈত্যপ্রবাহ। গ্রামে গ্রামে চলছে নতুন ধানের নবান্ন উৎসব। নানা স্বাদের পিঠা-পুলিতে ম ম করছে শীতের সকাল। দাদি, নানি কিংবা মায়ের হাতে তৈরি চিতই, দুধচিতই, ভাঁপা, পুলি, চাঁদপুলি, পাটিসাপটা, পাক্কনসহ তেলেভাজা নারকেল, গুকিংবা খেজুরের রসের বাহারি সব স্বাদের পিঠায় ডুবে আছে গ্রামের প্রতিজন মানুষ।
কিন্তু রাজধানীতে তার ব্যতিক্রম। শীতের সকালে গ্রামের লোকেরা যখন পিঠা-পুলি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, ঠিক ওই সময় অফিসমুখী ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানীবাসী। রাস্তার মোড়ে, ফুটপাতে কিংবা ভাসমান কোনো দোকানে স্বাদ নিচ্ছেন শীতের পিঠার। মৌসুম জুড়েই মেলে নানা স্বাদের নানান পিঠা। সকালে চাদর মুড়ি দিয়ে কিংবা সন্ধ্যার আড্ডায় পিঠাই হয়ে উঠেছে নাস্তার প্রধান উপলক্ষ। শিক্ষার্থীরাও বন্ধুসমেত চলে আসছে পাশের কোনো পিঠার স্টলে। নানা স্বাদের পিঠার সাথে মিলছে বিভিন্ন স্বাদ ও বর্ণের ভর্তা। শুঁটকি, শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ, সরষে বাটা, রসুন, ধনে পাতা, কালিজিরা, তিলসহ নানান ভর্তার স্বাদ নিতে পারছেন শহুরে ক্রেতারা। নগর জীবনে শীতের পিঠা ও রসনাবিলাসের সুযোগটি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী কিছু নিম্নবিত্ত নারী। ৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে পছন্দমতো পিঠা ও ভর্তার স্বাদ নিতে পারছেন যে কেউ। রাজধানীর পলাশীর মোড়ে পিঠার দোকানে কথা হয় খাইরুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, চাকরির কারণে মায়ের থেকে দূরে থাকেন। চাইলেই মায়ের হাতের সুস্বাদু পিঠা, ভর্তা খেতে পান না। শীতের মৌসুমি পিঠা খেতে ইচ্ছে হলে পিঠার দোকানে চলে আসি। মাঝে মাঝে লম্বা লাইন পড়ে গেলেও বিভিন্ন স্বাদের পিঠা আর ১০-১৫ পদের ভর্তার লোভ সামলাতে পারেন না তিনি। রাজধানীর গ্রীনরোডে ভ্রাম্যমাণ দোকানি কবির হোসেন। কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় স্থায়ীভাবে বসতে পারেন না বলে তিন-চার পদের বেশি পিঠা বানানো সম্ভব হয় না তার। তবে ভর্তা করেন ১৫-২০ পদের। তিনি জানান, সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ তার ক্রেতা। সেন্ট্রাল রোডের এক গৃহিণী জানান, সময় স্বল্পতার কারণে শীতের সময় সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন না তিনি। গ্রাম বাংলার ঐত্যিবাহী পিঠার সঙ্গে পরিচয় করাতে তিনি নিজেই বিভিন্ন পিঠা বানিয়ে খাওয়ান ছেলে-মেয়েদের।