এশিয়ায় সবচেয়ে কম মজুরি পায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক
ফারমিনা তাসলিম : গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি যখন পাকিস্তানে ৯৯ ডলার, কম্বোডিয়ায় ১২৮ ডলার, ভারতে ১৩৬ ডলার, ভিয়েতনামে ১০০ ডলার এবং চীনে ২৯১ ডলার তখন তা বাংলাদেশে মাত্র ৭১ ডলার। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সাথে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের দরকষাকষিতে দুর্বলতা। বিবিসি বাংলাকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ, সিপিডির গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ তথ্য জানিয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেন, এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ সবচেয়ে ন্যূনতম মজুরি দিচ্ছে। সামগ্রিকভাবে গড়পড়তাভাবে যদি সকল গ্রেডের মজুরি বিবেচনায় নেওয়া হয়, মাসিক হিসেবে বাংলাদেশের মজুরি অন্যদেশ কিছুটা ওপরে। কিন্তু শুরুর গ্রেডে যারা ঢুকছেন গ্রেড-৭ যাদেরকে বলা হয় তারা কিন্তু এখনো অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় কম বেতন পাচ্ছে।
পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষে। এশিয়ার মধ্যে ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হয় এ দেশে। শ্রমিকদের বড় কোনো বিক্ষোভ ছাড়া বেতন বাড়ানোর লক্ষ্যে মালিক পক্ষ মজুরি বোর্ড গঠনে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশের মালিকরা কেন কম বেতন দেন? অন্যদেশগুলোর সাথে এখানকার শ্রমিকদের বেতনের তফাৎটা কেমন?
এ প্রসঙ্গে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলাকে বলেন, প্রথমত দেখার বিষয়- সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে শ্রমিকদের আয়ের সম্পর্ক থাকে এবং এর সঙ্গে বাজারে শ্রমিকের সরবরাহ ও উৎপাদনশীলতা, মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এগুলোর সাথে সম্পর্ক থাকে। কোন দেশে বাংলাদেশের মতো ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে অত্যধিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয় তখন স্বাভাবিকভাবে শ্রমিক সরবরাহ বেড়ে যাবে। মজুরির ওপরে তার একটা নেগেটিভ স্কিম পড়বে সেটি দিক। কিন্তু সরকারের একটা দায়িত্ব রয়েছে আইনী কাঠামোর মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরিটা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটি হয়, বাজার কাঠামো ও সরকারের আইনী কাঠামো কোনটি আসলেই উপযুক্তভাবে কাজ করে না। এ প্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্রমিকরা বরাবরই বঞ্চিত হয়েছে। তবে তার ভিতরে কিছুটা ইতিবাচক গত ৭/৮ বছরের ভিতরে তিনবারের মতো এটি রিভিশনভাবে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
কী কারণে বাংলাদেশের মালিকরা বেতন বাড়িয়ে দিতে রাজি হন না প্রশ্নের জবাবে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের আইনী কাঠামোকে উপযুক্তভাবে কাজ করত তাহলে মালিকরা সেটা মানতে গিয়ে শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে পারতেন। আমাদের এখানে ন্যূনতম মজুরি কয়েক বছর পর পর পুনঃনির্ধারণ হয়। তখন ১২ টি সূচকের ভিত্তিতে পুনঃমজুরি নির্ধারণ হওয়ার কথা তা মাত্র দুটা সূচকের তথ্য-উপাত্ত জাতীয়ভাবে পাওয়া যায়। তথ্য-উপাত্তগুলোর জাতীয় পর্যায়ে তথ্য না থাকার কারণে এগুলো কার্যকর করার ক্ষেত্রে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে এবং মালিকপক্ষের একটা চাপ কাজ করে এবং শ্রমিকরা সেখানে তথ্য-উপাত্তের অভাবে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারে না। সে জায়গায় তাদের একটা দুর্বলতা কাজ করে। আবার অন্যদিকে মালিকদের ক্ষেত্রে যে বিষয়টা বলা হয় তারা তা বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ অন্যান্য দেশের মতো দর নির্ধারণে দরকষাকষি করতে পারেন না। কিন্তু তারপরেও আমরা দেখতে পেয়েছি একটা ডেনিম জিন্স বানাতে চীনের একজন উদ্যোক্তা পান ৭ দশমিক ৬৯ ডলার, বাংলাদেশে পায় ৭ দশমিক ৫২ ডলার, ভিয়েতনামে পায় ৭ দশমিক ৬২ ডলার। অর্থাৎ আমাদের দেশে তারা কম মূল্যে অফার করছে।
বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশিরা দেনদরবার কতটা করছে প্রশ্নের উত্তরে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, কম মূল্য বাংলাদেশে দেওয়ার বড় কারণ হচ্ছে শ্রমিকদের মজুরি কম দিতে হয়। কাঠামো হিসেবে, সামগ্রিক হিসেবে মজুরির প্রভাব সামগ্রিক মূল্যর মধ্যে পড়ে। এক্ষেত্রে যদি আমাদের উদ্যোক্তারা ভালোভাবে নির্ঘোষিত করতে পারত এবং সরকারের দিক আইন কাঠামো আরও একটু শক্তিশালী থাকত তাহলে কিন্তু মজুরি সহজভাবে বাড়তে পারত। এটি শুধু উদ্যোক্তার ওপর পড়তো না ক্রেতা বা বায়ার কিন্তু এটি দিতে বাধ্য থাকতেন। তাদের কমপ্লাইন্সের গাইডলাইন সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দেশের আইন কাঠামো মানার বাধ্যবাধকতা থাকে। তাহলে আমাদের এখানে ন্যূনতম মজুরির মানদ- আরও সঠিক করা যেত। তার সুযোগটা কিন্তু সরাসরি একজন শ্রমিককে দেওয়া যেত। সেটি আমরা এখানে প্রত্যাশা করি।