সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও কিছু কথা
৫ জানুয়ারি, ২০১৪ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হওয়ার পর দেশের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা থেমে গেছে। এমনকি হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা-অত্যাচার নির্মূল করা হয়েছে। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও আচরণ এখনো আছে। তবে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিদেশী রাষ্ট্রের ক্রমাগত অভিনন্দনে মুখরিত এখন বাংলাদেশের প্রতিটি আঙিনা; অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিস্ময়করভাবে আমরা লক্ষ করছি, যে সব ব্যক্তি নির্বাচনের বিপক্ষে ছিলেন তারা এখন সরকারের গুণগানে আলোড়িত; টিভির টকশো’তে তারা বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কৃতিত্বে আনন্দিত। তবু অপপ্রচার থেমে নেই। এখনো ভারত বিরোধী সুড়সুড়ি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে; অপপ্রচারের অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছে জামায়াত-বিএনপির হাতে। বর্তমান পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে মনে করছে জামায়াত-বিএনপি। দৈনিক নয়াদিগন্ত, দিনকাল ও ইনকিলাব পত্রিকার মিথ্যা সংবাদ নিয়ে খালেদা জিয়া মহাভক্তিতে যখন বক্তব্য রাখেন, তখন বোঝা যায় এদের স্বার্থের জায়গাটি কোথায়। এর আগে ওয়াশিংটন টাইমসের মতামত পাতায় প্রকাশিত খালেদা জিয়ার নিবন্ধটি ছিল বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অন্যতম দৃষ্টান্ত। তখন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করার মধ্যে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বও প্রকাশিত হয়েছে।
দেশ-বিদেশে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিচিত্র অপপ্রচার বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্তিতে ফেললেও আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা পুনর্বহাল হতে দেখা গেছে বারবার। কারণ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব ছিল না। জনগণের কাছে তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার এখন। আস্থাশীল সরকারের প্রতি দেশের বিশিষ্টজনদের দৃষ্টি পূর্ব থেকেই ইতিবাচক ছিল। যেমন, ২০ দলীয় জোটের শরিকরা প্রত্যাখ্যান করলেও নির্বাচনকালীন সময়ে সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে গঠনমূলক ও ইতিবাচক হিসাবেই দেখেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমরা সকল দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। বিরোধী দলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি যে, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন, যাদেরকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মন্ত্রিসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি এবং নির্বাচনে যাতে কারও কোনো সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দূর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে। আমি বিরোধী দলের নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দিবেন। আমার এ অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দেবেন। তাই আসুন, দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করি। যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজ পায়। একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলতে পারি। সকল ভেদাভেদ ভুলে ২০২১ সালের মধ্যে গড়ে তুলি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা।’ ১৮ অক্টোবর(২০১৩) সম্প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণই ৫ জানুয়ারি(২০১৪) দশম সংসদ নির্বাচন পূর্বে জনগণের কাছে শুভ উদ্যোগ হিসেবে গণ্য হয়েছিল। তিনি নির্ভরতার উৎস হয়ে ওঠেন। দেশ ও জাতির কল্যাণে সাংবিধানিক উপায়কে অবলম্বন করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় প্রকৃতঅর্থে বাস্তব হয়ে উঠেছে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর। কেবল নতুন সরকার নয় গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস জুড়ে অবরোধ-হরতালের নামে দেশের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের তা-ব ও হত্যালিপ্সা বন্ধ করার পুরো কৃতিত্ব বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা অভিনন্দিত হয়েছে সারা বিশ্বজুড়ে। এমনকি বর্তমান সরকারের গত মহাজোট আমলে অর্জিত সকল সফল কর্মকা-ের প্রশংসা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে। আর এজন্যই ৬ জানুয়ারি (২০১৮) ক্ষমতার ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা অবশ্য ২০১৯ সালে দেখতে চাই, সহিংসতামুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে সাম্প্রদায়িকতা ও অপশক্তির পরাজয় ঘটবে, জয়ী হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি।
লেখক : অধ্যাপক এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ