১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু না আসলে বিজয় অসম্পূর্ণ থেকে যেত : শাহরিয়ার কবির
বায়েজিদ হাসান : ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তারিখ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ক্যালেন্ডারে অনেকগুলো তারিখ আছে, যেটা শুরু হয়েছে ৭ মার্চ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস তার কালপুঞ্জির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো ১০ জানুয়ারী। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করল। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধটা পরিচালিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং তার নামেই। পরিচালনায় না থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষঙ্গিক প্রেরণায় এবং তার নির্দেশ মতোই সরকার গঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস নিয়ে আলাপকালে আমাদের অর্থনীতিকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এইসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণীত হয়েছে ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরবে কিনা এটা তো খুবই অনিশ্চিত ছিল। ইয়াহিয়ার সামরিক পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তারা যে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিল। সেটা তো হয়েছিল তাকে হত্যার জন্যই। বিচারের একটা ক্রমশ চালাতে চেয়েছিল এবং এই বিচার বন্ধের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা পালন করেছিল ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতারা। তারা আন্তর্জাতিকভাবে এটা বুঝাতে পেরেছিলেন যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। কারণ বঙ্গবন্ধু ছিলেন সারা পাকিস্তানের জনগণের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি। তার সঙ্গে আলোচনা না করে কোনো সমাধানে আসা যাবে না। কোনো সমস্যা সমাধান করা যাবে না। এই বাস্তবতাটা ভারতের ইন্দিরা গান্ধি সারা বিশ্বে তুলে ধরেছেন। তারপরও বিচার কার্যকম তারা স্থগিত রেখেছিল। কিন্তু তাকে নিয়ে সবারই সন্দেহ ছিল।
তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর যখন পরাজয় আসন্ন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন আত্মসমর্পণ করল, তখন বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া ছাড়া পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হাতে আর কোনো উপায় ছিল না। তাদের কোনো পথ খোলা ছিল না। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় আর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিশাল আত্মসমর্পণ করার কারণে তারা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। যখন বঙ্গবন্ধু আসলেন তখন তো ঢাকা উত্তাল, সব মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। রেডকোর্সে তো মানুষ জায়গা হয়নি। বিমানবন্দর থেকে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত একটা অসাধারণ মুহুর্ত ছিল হাজার হাজার মানুষের। বাবা মায়েরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে ছিল, শুধু বঙ্গবন্ধুকে একনজর দেখার জন্য। আমরা দেখেছি, তেজগাঁও থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত মানুষ আর মানুষ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওইদিন তিল ধারণের জায়গা ছিল না, এত মানুষ ছিল। অনেকেই বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে যা মানুষ হয়েছে তার থেকে বেশি হয়েছে এবং এটা খুবই স্বভাবিক ছিল। বঙ্গবন্ধু যদি ফিরে না আসতো, মুক্তিযুদ্ধের যে বিজয় তা অসম্পূর্ণ থেকে যেত। আনন্দ অসম্পূর্ণ থেকে যেত। বঙ্গবন্ধু ফেরাতে বিজয়ের আনন্দ পরিপূর্ণতা পেয়েছে।
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন