অন্তর্কোন্দলে বিশ্ব তাবলিগে জামাত
মারুফ হাসান নাসিম : তাবলিগ জামাতের আমিরের পদ থেকে ভারতের মাওলানা মুহাম্মদ সা’দকে সরিয়ে দেওয়া হলে ‘বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশ’ মালয়েশিয়ায় স্থানান্তরের হুমকি দিয়েছে মালয়েশিয়া তাবলিগের শুরা কর্তৃপক্ষ। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশের প্রধান মার্কাস কাকরাইলে অবস্থিত শুরার সদস্যের কয়েকজন বলেছেন, তারা এই সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আবার অন্য কয়েকজন কথা বলতেই চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেছেন, দিল্লির নিজাম উদ্দিন মসজিদ মার্কাস থেকে মাওলানা হযরত ইলিয়াসের (র.) হাত ধরে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের জন্ম। এরপর তার ছেলে মাওলানা ইউসুফ আমির হন। মাওলানা ইউসুফের ইন্তেকালের পর তার ভায়রা মাওলানা এনামুল হাসান বিশ্ব তাবলিগ জামাতের হাল ধরেন। এভাবেই চলে আসছিল বিশ্ব তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম এবং নেতৃত্বের ক্রমধারা। কিন্তু তৎকালীন আমির মাওলানা এনামুল হাসান মৃত্যু শয্যায় ১০ জনের একটি কমিটি করে দেন পরবর্তী আমীর নির্বাচন করার জন্য। তার মৃত্যুর পর ১০ জনের এই কমিটি একজন আমীর নির্বাচন না করতে পেরে ১৯৯২ সালে ৩ জন আমির নির্বাচন করেন। এই তিনজন হলেন, মাওলানা ইজহার, মাওলানা যুবায়ের হাসান এবং মাওলানা সাদ। আমির নির্বাচনের দুই বছর পরই মাওলানা ইজহার মারা যান এবং ২০১৪ সালে মাওলানা যুবায়ের হাসান মারা যান। তার মারা যাওয়ার পর সবাই মাওলানা সা’দকে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের একমাত্র আমির হিসাবে মেনে নেয়। সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল মাওলানা সাদের নির্দেশনায়।
তিনি আরও বলেন, এই সবের মধ্যে বাদসাধে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের ইজতেমায় ঘোষণাকৃত পাকিস্তান আলমি শুরা। এই শুরার কারণেই বিভেদ শুরু হয়। তাদের ভাষ্য, যে দেশে ইজতেমা হবে সে দেশের আমিরই হবে ইজতেমার জিম্মিদ্বার। কিন্তু বিশ্ব তাবলিগ জামাতের জন্মলগ্ন থেকে নিয়ম হলো জোড় বা ইজতেমার জিম্মিদ্বার দিল্লির নিজাম উদ্দিন মসজিদ মার্কাস থেকে আমির মনোনীত করে দেন। পাকিস্তান আলমি শুরা নিয়ে দুই ভাগ হয়ে যায় বিশ্ব তাবলিগ জামাতের নেতা ও সাথীরা। এর ফলে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের শুরাদের মধ্যেও বিভেদ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের শুরা হলেন ১১ জন। তারা হলেন মাওলানা ফারুক, মাওলানা যুবায়ের, মাওলানা মোহাম্মাদ হোসেন, মাওলানা মোর্সারফ, মাওলানা মোজাম্মেল হক, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা রবিউল হক, সৈয়দ ওয়াছিফুল ইসলাম, খান মো. সাহাবুদ্দিন নাসিম, শেখ নুর মোহাম্মাদ, প্রফেসর ইউনুস। এদের মধ্যে মাওলানা ফারুক নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখলেও মাওলানা যুবায়ের, মাওলানা মোহাম্মাদ হোসেন, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা রবিউল হক পাকিস্তান আলমি শুরার পক্ষ নিয়েছেন।
এই ব্যাপারে জানতে মাওলানা ফারুককে ফোন করলে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না এবং এই নিয়ে আমার কোনো বক্তব্যও নেই। তাকে মালয়েশিয়া তাবলিগ জামাতের চিঠি এবং পাকিস্তান আলমি শুরা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না এবং আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদও সৃষ্টি হয়নি। আমাদের শুরার অন্যতম সদস্য মাওলানা যুবায়ের অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দিল্লির নিজামুদ্দিনকে ভালোবাসেন এবং মাওলানা সাদকেও ভালোবাসেন।
পাকিস্তান আলমি শুরার সাথে বাংলাদেশের শুরার কেউ জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাকিস্তান আলমি শুরাতে মাওলানা যুবায়ের, মাওলানা রবিউল হক, সৈয়দ ওয়াছিফুল ইসলামের নাম দিলেও তারা এখনো সেখানে সই করেননি। তাহলে এর মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে, তারা সবাই এখনো নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সাদের সাথেই আছেন।
পক্ষে বিপক্ষ নিয়ে ঢাকাস্থ মার্কাসের নেতা ও সাথীদের নিয়ে গতকাল সাপ্তাহিক মাসোয়ারার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত প্রায় ৯০ শতাংশ নেতা ও সাথীরা দিল্লির নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সাদকে তাদের আমীর হিসাবে চান। তারা ইজতেমায় তাকেই নেতা হিসাবে মেনে নিয়ে তার বয়ান শুনতে চান।
মাওলানা ফারুক বলেছেন, দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে মাওলানা সা’দ নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং পাঁচবার তওবা করেন। এই নিয়ে অভিযোগকারী দেওবন্দ মাদরাসা মাওলানারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। উল্লেখ্য, মাওলানা সাদ আল্লাহর পয়গাম্বর হযরত মুসা আ. সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যাসহ আরও কিছু ভুল বক্তব্য দিয়েছিলেন।