তাবলিগ জামাতের সাদবিরোধী বিক্ষোভে মানুষের ভোগান্তি
মাসুদ আলম : বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মারকাজের (নেজামুদ্দিন) দিল্লির মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বাংলাদেশে আসার প্রতিবাদে বিমানবন্দর এলাকায় বিক্ষোভ করেছে তাবলিগ জামাতের একাংশ। তাবলীগ ও কওমি মাদ্রাসার অনেক বিক্ষোভকারী কাকরাইল মসজিদের সামনেও বিক্ষোভের জন্য জড়ো হয়। এ সময় মসজিদের মুল দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নিয়ে যায়। আসরের নামাজের পর বিক্ষোভকারীরা এয়ারপোর্ট রোড থেকে অবস্থান তুলে নেয় ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
গতকাল সকাল থেকে বিমানবন্দর এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। টঙ্গি এলাকাও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে বিমানবন্দরে সাদের পক্ষেও তাবলিগ জামাতের একাংশের অবস্থান নেয়।এই সময় টঙ্গি থেকে মহাখালী পর্যন্ত যানবাহন চলাচল স্থগীত হয়ে যায়। ঢাকার বাইরে থেকে আসা যাত্রীরা রাস্তাতেই বসে থাকেন ঘন্টার পর ঘন্টা। গুলশান -বনানী ও এয়ারপোর্ট রোড সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এর প্রভাব পড়ে ঢাকার অন্যান্য এলাকাতেও।
সাদ বিরোধী বিক্ষোভকারীরা বিমান বন্দর এলাকায় বিভিন্ন গাড়িও চেক করেন। যাতে মাওলানা সাদ ঢাকার ভিতরে প্রবেশ করতে না পারেন।
গতকাল বুধবার সাড়ে ১২টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন মওলানা সাদ । পরে বিমানবন্দর থেকে কঠোর গোপনীয়তায় পুলিশ প্রহরায় বিকেল ৪টার দিকে কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের মারকাজে (অফিস) পৌঁছান সাদ। বিক্ষোভকারীদের দাবি মাওলানা কোরআন হাদিসেরও অপব্যাখ্যা করেছেন। এ করানেই তারা প্রতিবাদের মাধ্যমে বিমানবন্দর থেকে তাকে ফিরে যাওয়ার দাবি করছেন।
কাকরাইল মসজিদেও সাদের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেয় তাবলিগ জামাতের নেতারা। ভারতীয় উপমহাদেশের সুন্নী মতাবলম্বী মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূল কেন্দ্র বা মারকাজ দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় ওই পর্ষদকে বলা হয় নেজামউদ্দিন, যার ১৩ জন শুরা সদস্যের মাধ্যমেই উপমহাদেশে তাবলিগ জামাত পরিচালিত হয়। এই পর্ষদের সদস্য মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি সম্প্রতি নিজেকে তাবলিগের আমির দাবি করে বসেন। ফলে তার বাংলাদেশে আসা নিয়ে বাংলাদেশে তাবলিগের মূল দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।
পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, বিকাল সাড়ে ৩টার পর মাওলানা সাদ এসে পৌঁছেছেন। কাকরাইল মসজিদের সামনে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা রয়েছে।
বিমানবন্দর থানার ওসি নুরে আযম মিয়া বলেন, রাস্তা থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা রাস্তার পাশে অবস্থান নিয়েছে। যানচলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে। অবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সা’দ পক্ষের তাবলিগ জামায়াতের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, তাবলিগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কাকরাইল মসজিদে আছেন। পুলিশের সহায়তায় তিনি ককরাইলে যান। সেখানেই তিনি অবস্থান করবেন। মাওলানা সা’দ ইজতেমায় অংশ নেবেন কিনা আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার বিষয়ে আলেমদের যে বক্তব্য তা আমরা শুনবো, এরপর দেখা যাবে তিনি ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন কিনা।
কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সিনিয়র সহসভাপতি ও তবলিগের শূরার উপদেষ্টা আল্লাম আশরাফ আলী বলেন, মাওলানা সাদ ইজতেমায় অংশ নিতে পারবে না। তাকে দেশে ফিরে যেতে হবে। অন্যথায় ওলামায়ে কেরাম যে কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ার দেন তিনি। সরকার কর্তৃক গঠিত ওলামায়ে কেরাম ও তবলিগের মুরুব্বিদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মাওলানা সাদের বিশ্ব ইজতেমায় আসার ষড়যন্ত রুখে দেয়া হবে।
বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, মাওলানা সাদ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আকাবিরে আসলাফের মানহাজের বিপরীতে বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এমনকি তিনি কোরআন হাদিসেরও অপব্যাখ্যা করছেন। আমরা গত বছর চেষ্টা করেছিলাম তিনি যেন ইজতেমায় না আসেন। এ বছরও সরকারের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি গঠন হয়। সেই কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য এবং সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাওলানা সাদের ইজতেমায় না আসার পক্ষে মত দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সেই মতামত হস্তান্তর করেন। এর পরও মাওলানা সাদ কীভাবে বাংলাদেশে আসেন আমরা তা বুঝতে পারছি না।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ জানুয়ারি টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। এরআগেই আয়োজক তাবলীগ জামায়াতের মধ্যে মাওলানা সাদের আসা না আসা নিয়ে দুই ভাগ হয়ে যায়। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত