প্রকৃতির সুরক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা
মিযানুর রহমান জামীল
ভারসাম্য ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে জীবন থাকে সু-নির্মল। প্রফুল্ল থাকে হৃদয়-মন। সজীব থাকে প্রাণ। সুন্দর থাকে জীবনের সার্বজনীন দিক। এর ফলে চেতনাবোধে লাগে মার্জিত রুচি। পৃথিবীর সব জাগায় পরিচ্ছন্ন পরিবেশের বিশেষ মূল্যায়ন রয়েছে। রয়েছে তার প্রতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। বিশ্বজমীনের সব সৃষ্টির জন্য যেমনি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন ভূমির প্রয়োজন তেমনি সৃষ্টির সেরা জীব মানবজাতির জন্যও তার বাস্তবায়ন অপরিহার্য। সূরা হিজরের ১৯-নং আয়াতে বলা হয়েছে “পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করিয়াছি, এবং উহাতে পর্বতমালা স্থাপন করিয়াছি; আমি উহাতে প্রত্যেক বস্তু উদ্গত করিয়াছি সুপরিমিতভাবে।”
সুরা হিজরের ২০-নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘এবং উহাতে জীবিকার ব্যবস্থা করিয়াছি তোমাদিগের জন্য আর তোমরা যাহাদিগের জীবিকাদাতা নহে তাহাদিগের জন্যও।’ অথচ এসব জীবিকানির্ভর বস্তুসামগ্রী বা ফলফলাদিতে আমরাই কৃত্রিমভাবে বিষ ঢুকিয়ে মানবসভ্যতাকে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি; অথচ এগুলো যারা তৈরি করছে তারা আমাদের মিত্র নয়। আবার তারা তাদের তৈরি এ বিষ সেবন থেকে সতর্কতা অবলম্বন করে অন্য জাতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। এ জন্য যুগ যুগ ধরে যারা জুলুম-অত্যাচার চালিয়ে বিশ্ব শান্তির দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হয়েছে। বিলীন হয়েছে কালের উল্টোস্রোতে। হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘জুলুম কেয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’
এই দুনিয়ার শুরু ইতিহাসে তথা হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর যামানা থেকে হযরত মুহাম্মদ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামের যামানা বা আজকের এই সমাজ ব্যবস্থা পর্যন্ত দীর্ঘ ইতিহাসের সংরক্ষিত পৃষ্ঠায় দৃষ্টি ফেরালে বের হয়ে আসে পুরনো সেই সোনালী অধ্যায়ের সোনালী বাণী, যা ছিল বিশ্ব নবীর জবান নিসৃত পবিত্র হাদীস ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।’ হাদীসের ব্যাখ্যায় গেলে বিশ্বসমাজকে পেছনে রেখে বলতে হবেÑ ‘শুধু প্রকাশ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সমাজ-পরিবেশে শান্তির পয়গাম হতে পারে না। শান্তির জন্য মানুষের ভেতরের আত্মা ও মনকে পরিষ্কার রাখা বাঞ্ছনীয়। পাশাপাশি নিজের ভেতরের শিষ্টাচারহীন অদৃশ্য ময়লা-আবর্জনা দ্বারা যাতে অন্য ব্যক্তি বা জাতি-গোষ্ঠী আক্রান্ত না হয় সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখা।
অথচ পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় যারা বড় বড় গবেষণাগার তৈরি করেছে, নির্মাণ করেছে বিশ্বস্বাস্থ্যকেন্দ্র। আজ তাদের হাতেই বিশ্ব শান্তি খর্ব হচ্ছে। বিলীন হচ্ছে জনপদ। ধ্বংস হচ্ছে অনেক অসহায় সম্প্রদায়। নিঃশেষ হচ্ছে মুসলিম জাতি। অথচ তারা মানব সভ্যতার শ্লোগান দিয়ে মানুষের সাথে ধোকা-ছলনা ও প্রতারণা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। পৃথিবীর যেখানে সু-শৃংখল জীবন-যাপনের সন্ধান মিলেছে সেখানেই তারা বোমা মেরে চালিয়েছে ভয়ানক আগ্রাসন। যার ফলে প্রকৃতিতে নেমে এসেছে কঠিন বিপর্যয়। আর মানবকুল হয়েছে তাদের অত্যাচারের বলি। পৃথিবীর এ বৈরি অবস্থার জন্য দায়ি মানুষ। মানুষের কারণে মানুষের বিপর্যয় ক্ষতি ও ধ্বংস। এজন্য ভাল মানুষের উচিত খারাপদের ভাল হিসেবে গড়ে তোলা। কবি সত্যিই বলেছেন- ‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহু দূর/ মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে শুরাশুর।/ প্রীতি ও প্রেমের পূর্ণ বাঁধনে মিলিলে পরষ্পরে,/ স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদের কুঁড়ে ঘরে।’ আমাদের পরিবেশ প্রকৃতি আমাদের জন্য স্বর্গের নির্দশন বয়ে আনুক। নির্মাণ হোক একটি সু-কোমল ছোঁয়ার বর্ণিল পৃথিবী। মানুষ সমাজ ও জাতির কাছে এই প্রত্যাশাই করি।