কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী সুফিয়ার রহমান তাবলীগ জামাতের অন্তর্দ্বন্দ্বের জন্যে হেফাজতিরা দায়ী
ফারমিনা তাসলিম : ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক কাজী সুফিয়ার রহমান তাবলীগ জামাতের ইজতেমায় মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভীর যোগদানের বিরোধিতার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের হেফাজত ইসলামের সমর্থকরা এজন্যে দায়ী এবং তারা ধর্ম প্রচারে রাজনীতি মিলাতে চায়। তিনি সাদ কান্ধলভীর যোগদানকে ঘিরে ঢাকায় যে প্রবল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে তা নজিরবিহীন বলেও মন্তব্য করেন। বিবিসি বাংলাকে অধ্যাপক সুফিয়ার এসব কথা বলেন। তিনি এওআরও বলেছেন, এবার ইজতেমা টঙ্গীতে হলেও আগামীতে তা মালয়েশিয়ায় করা যায় কি না এমন চিন্তাভাবনা হচ্ছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাবলীগ জামাতের মধ্যে এ দ্বন্দ্বকে ভারতে কী চোখে দেখা হচ্ছে? এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক কাজী সুফিয়ার রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ১৯২৭ সালে মোহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী এ সংগঠনটি গঠন করেন। এদের মূল কাজ হচ্ছে ধর্মীয় সংস্কার সাধন করা বা আধ্যাত্মিক জিহাদ। এদের উদ্দেশ্য হলো কালেমা, সালাত, ইলম, ইকরামে মুসলিম, ইখলাসে নিয়ত এবং দাওয়াতে তাবলীগ, এগুলো প্রচার করা। বর্তমানে তাবলীগের ভারতীয় উপমহাদেশের মূল জায়গা হচ্ছে নিজাম উদ্দিন মারকায, এটার আমির হচ্ছেন মাওলানা সাদ। বিগত কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমাতে তিনি যান এবং সেখানকার শেষ মোনাজাতটা তিনিই করেন।
এবারের ইজতেমায় মাওলানা সাদকে নিষেধ করার কারণ কী ? জবাবে অধ্যাপক সুফিয়ার বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় তাকে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এটার পূর্বাভাস আগে থেকে শোনা গিয়েছিল। মাওলানা সাদকে নিয়ে তার অনুসারীরা দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। এ পরিস্থিতির কারণ হলো সাদ কিছু কথাবার্তা বলেছেন, যা অনেকের পছন্দ হয়নি। কিন্তু তার পান্ডিত্য, বিদ্যা, বুদ্ধির কারণে তার গুণগ্রাহীরা তাকে খুবই সম্মান প্রদর্শন করেন। সেজন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বিশেষ ভিসা দিয়েছিল। তিনি সে ভিসা অনুযায়ী গিয়েছিলেন। ওখানে যাওয়ার পর সমস্যা দেখা দিয়েছে। সে সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এবারের ইজতেমায় তাকে অংশগ্রহণে নিষেধ করা হয়েছে।
তাবলীগ-জামাতের শীর্ষ নেতৃত্বকে ঘিরে অর্ন্তদ্বন্দ্বটি ভারতের গন্ডি ছাড়িয়ে প্রতিবেশি দেশগুলোতেও দেখা যাচ্ছে। তার কী প্রভাব পড়তে পারে সংগঠনের ওপর?
জবাবে অধ্যাপক সুফিয়ার বলেন, এটা একটা আধ্যাত্মিক সংগঠন। তাদের কাজ হচ্ছে ধর্ম প্রচার এবং প্রসার করা। কিন্তু বাংলাদেশের হেফাজতে ইসলামই মূলত এর বিরোধিতা করছে। ঢাকা বিভাগের যুগ্ম সম্পাদক ফজলুল হক কাশেমী এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাদ সম্পূর্ণ ধর্মীয়ভাবে তাবলীগের আর্দশ প্রচার করেন এবং তাদের লক্ষ্য ধর্ম প্রচার এবং প্রসার করা, কিন্তু হেফাজতি ইসলামরা এর সাথে রাজনৈতিক ব্যাপারও মিলাতে চাইছেন। এর বিরোধটা কিন্তু এখান থেকে।
তাবলীগ জামাতের অনুসারী ও দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং পাকিস্তানে যারা আছেন তাদের ওপর এ বিরোধের কী প্রভাব পড়তে পারে?
জবাবে অধ্যাপক সুফিয়ার বলেন, এ ঘটনার প্রভাব তো থাকবে। ইজতেমা টঙ্গী থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে মালয়েশিয়া করা যায় কিনা, শেষ পর্যায়ে এসে সেটা কার্যকরি হয়নি। কিন্তু এবার টঙ্গীতে হবে। সমস্যা হলো তাবলীগের সংবিধান হচ্ছে ধর্মভিত্তিক, সেটার মধ্যে তারা সীমাবদ্ধ থাকে। তারা রাজনৈতিক সংশ্রবের মধ্যে মিশতে চান না। কিন্তু আরেকদল বলেন রাজনীতির বাইরে থেকে ইসলামকে সম্পূর্ণভাবে বুঝা যায় না, অনুভব করা যাবে না। এ গন্ডগোলের মূল কারণ হচ্ছে সেখানে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ কতটা করা যাবে বা যাবে না। এর প্রভাব অবশ্যই হবে। তাবলীগ জামাতের পীঠস্থান হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশ। কিন্তু এখন বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশে তাবলীগ জামাতের কার্যক্রম চালু আছে। কাজেই এর একটা প্রভাব বুঝা যাবে। কিন্তু এটা যেহেতু সঙ্গে সঙ্গে ঘটেছে, এর সুদূর পরবর্তী কী রিঅ্যাকশন হবে, সেটা এত তাড়াতাড়ি বলা সম্ভব না।