‘গণতন্ত্র বিপন্ন, সুপ্রিম কোর্টে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না’ ভারতের প্রধান বিচারপতিকে চার বিচারপতির চ্যালেঞ্জ
আশিস গুপ্ত, নয়াদিল্লি : ভারতের সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতি গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান বিচারপতির কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, যেভাবে তিনি আদালত চালাচ্ছেন তা ভারতের গণতন্ত্রকেই হুমকির মুখে ফেলে দেবে। চার প্রবীণ বিচারপতি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র বিপন্ন। সুপ্রিম কোর্টে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না।’ সংবাদ সম্মেলনে ওই চার বিচারপতির নজিরবিহীন মন্তব্যের পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আলোচনায় বসেন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের সঙ্গে।
গতকাল শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন বিচারপতি জে চেলামেশ্বর। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বিতীয় প্রবীণতম বিচারপতি তিনি। তাঁর বাড়িতেই সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিলেন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি মদন বি লকুর এবং বিচারপতি ক্যুরিয়েন জোসেফ। কী কারণে তাঁদের এই নজিরবিহীন পদক্ষেপ? বিচারপতি চেলামেশ্বর বলেছেন, ‘দেশের ইতিহাসে এটা একটা অস্বাভাবিক ঘটনা। এরমধ্যে কোনও আনন্দ নেই, আমরা এটা করতে বাধ্য হয়েছি। সুপ্রিম কোর্ট ঠিকভাবে চলছে না।’ প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের কাজে যে তাঁরা অসন্তুষ্ট, তা গোপন না করেই চেলামেশ্বর বলেন, ‘দেশ এবং এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমরা ঋণী। এই প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে প্রধান বিচারপতি যাতে পদক্ষেপ করেন তা নিয়ে বোঝাতে গিয়েছিলাম। আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’ কর্মরত অবস্থায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন বিচারপতিরা এমন ঘটনা আগে ঘটেনি।
এই চার ক্ষুব্ধ বিচারক একটি চিঠিও বিলি করেছেন যেটি তারা এর আগে প্রধান বিচারপতিকে দিয়েছিলেন। চিঠিতে তারা বেশ কিছু বিচারিক নির্দেশের ব্যাপারে তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, এর ফলে ভারতে বিচার বিভাগের সার্বিক কার্যক্রম বিঘিœত হবে।
তারা বলেছেন, যেসব মামলার ফল ভারতের রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সুদুর প্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হয়, প্রধান বিচারপতি সেই সব মামলা বেছে বেছে তার পছন্দসই কিছু বেঞ্চে পাঠান।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর কাছে এসব বিষয়ে বার বার তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার পরও তিনি কর্ণপাত করেন নি বলে অভিযোগ করে এই চারজন বলেছেন, এরপর জাতির সামনে হাজির হওয়া ছাড়া তাদের সামনে আর কোন বিকল্প ছিল না।
কোন কোন মামলা এভাবে প্রধান বিচারপতি তার পছন্দসই বেঞ্চে পাঠিয়েছেন সেটি তারা উল্লেখ করেন নি।
তবে গত ডিসেম্বরে একটি মামলার শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের সঙ্গে বিচারপতি চেলামেশ্বরের সংঘাত বাধে। সেই মামলা চেলামেশ্বরের হাত থেকে নিয়ে অন্য চার বিচারপতির হাতে দিয়ে দেন। এই চার বিচারপতি মেনে নিয়েছিলেনÑ সুপ্রিম কোর্টে কোনও মামলার শুনানি কার হাতে যাবে তার সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার প্রধান বিচারপতির রয়েছে। ডিসেম্বরে মেডিকেল দুর্নীতি সংক্রান্ত ওই মামলার শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টে। লখনউ-এর একটি মেডিকেল কলেজ ঘুষ নিয়ে ছাত্র ভর্তি করিয়েছে এমন অভিযোগ ওঠে। তার জন্য কালো তালিকা করা হয় ওই কলেজকে। কলেজটি সেই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছিল। বিচারবিভাগও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অভিযোগ ওঠার পরে সেই মামলা অন্য বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।