ছাগলের গোস্ত হালাল ও শূকরের গোস্ত হারাম কেন!
মুফতী মুজাহিদ সরকার
ছাগল ও শূকর সাধারণত দেখতে এক রকম, উভয়ের আকৃতি ও গঠন এক ধরণের। কিন্তু শরীয়তের বিধানে ছাগলের গোস্ত পবিত্র ও হালাল আর শুকরের গোস্ত অপবিত্র ও হারাম। এজন্য অনেকের প্রশ্ন জাগে যে উভয়টি এক আকৃতির হওয়া সত্বেও শরিয়তের বিধানে পার্থক্য হল কেন? এ ব্যাপারে জনৈক হিন্দু পন্ডিত ফকিহুল মিল্লাহ আল্লামা মুফতী মাহমূদ হাসান সাহেবকে প্রশ্ন করেছিল। পন্ডিত বলেন: মাওলানা সাহেব! আপনাদের ধর্মে একটি বিচিত্রময় রহস্য রয়েছে। মাওলানা সাহেব বললেন: আমাদের ধর্মে সবকিছুই বিচিত্রময়। আপনার দৃষ্টি আকর্ষিত বিষয়টি বলুন: পন্ডিত বললেন দুটি জন্তুর আকৃতি ও গঠন এক অথচ একটিকে আপনারা হালাল বলেন অপরটিকে হারাম বলেন অর্থাৎ ছাগল ও শূকর, এর কারণ কি?
মাওলানা সাহেব বললেন: আপনার প্রশ্নের উত্তর একটু তিক্ত হবে কষ্ট পাবেন না তো? পন্ডিত বলল আরে না কষ্ট পাব কেন? মাওলানা সাহেব: উত্তরটি এমন যে তা অনুধাবন করলে নাকের পরশ পর্যন্ত জ্বলে যাবে। মুখ থেকে শুরু করে গলার ভেতর পর্যন্ত চামড়ার আবরণ ছিঁড়ে যাবে। পুরো জীবন এমন প্রশ্ন আর মুখ থেকে উচ্চারিত হবে না। কিন্তু আপনার সাথে পূর্ব থেকে সম্পর্ক আছে বিধায় অতিরিক্ত অংশগুলো বের করে হালকা তিক্ততার সহিত উত্তর দিচ্ছি শুনুন! কে সে অন্ধ? যে বলে যে, ছাগল আর শূকর একরকম। অথচ আমার মত ছাগলের দাড়ি আছে আর আপনার মত শূকরের দাড়ি নেই, ছাগল ঘাস খায় আর শূকর পায়খানা ও অন্যান্য অপবিত্র বস্তু খায়, ছাগলের স্তন দুটি আর শূকরের স্তন দুয়ের অধিক, ছাগলের স্তন দুরানের মাঝে আর শূকরের স্তন বক্ষের উপর, ছাগলের মাথায় শিং থাকে আর শূকরের মাথায় শিং থাকে না। মোটকথা উভয়ের সৃষ্টিগত আকৃতি ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের গঠন ভিন্ন। তাহলে কি অন্ধরা এ পার্থক্য দেখে না। তবুও যদি মেনে নেওয়া হয় যে, গঠন এক তবে বলুন আপনার আম্মা জীবিত আছে কি না?
পন্ডিত: আছে। মাওলানা সাহেব: আপনার বোন? পন্ডিত আছে। মাওলানা সাহেব: ছেলে মেয়ে কয়জন? পন্ডিত: দুছেলে। মাওলানা সাহেব: এই ছেলে দুটি কার গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণ করেছে স্ত্রী, নাকি মা, নাকি বোন? পন্ডিত: রাগান্বিত হয়ে স্ত্রীর গর্ভ থেকেই তো, মাওলানা সাহেব: রাগ করবেন না আপনার স্ত্রী, আম্মা ও বোন তিন জনই তো নারী। সবার আকৃতি এবং গঠনও এক রকম। সবার দুটি চোখ, দুটি কান, দুটি হাত ও দুটি পা আছে। সবাই তো এক রকম। তাসত্তে¦ও আপনি আপনার স্ত্রীকে নিজের জন্য হালাল মনে করেন আর আপনার আম্মা ও বোনকে হালাল মনে করেন না কেন?
(এবার পন্ডিতজীর কপালে পরিবর্তনের ছাপ দেখা গেল) মাওলানা সাহেব আরো বললেন: আপনার স্ত্রী ও আম্মার মাঝে বয়সের দিক দিয়ে পার্থক্য থাকলেও, বোন ও স্ত্রীর মাঝে তেমন পার্থক্য থাকবে না উভয়ে সমবয়সী হবে। তদুপরিও আপনার বোনকে হালাল মনে করেন না কেন? পন্ডিত: রাগের স্বরে বলল দেখুন এরা নাকি মুসলমান। আর এই নাকি তাদের চরিত্র। হঠাৎ কিভাবে মা-বোনের ইজ্জত পর্যন্ত পৌঁছে গেলো। মাওলানা সাহেব: তওবা! তওবা! পন্ডিতজী! আপনি ভুল বুঝলেন আমি আপনার মা-বোনের ইজ্জতের উপর আঘাত হানার ইচ্ছা মোটেও করি নি। বরং আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। যে, একই আকৃতির হওয়া সত্ত্বেও শরীয়ত একটিকে হালাল ও অপরটিকে হারাম করল কেন?
ইসলামী আইন বা নিয়ম-নীতির উপর যাদের মাথায় প্রশ্ন কিলকিল করে তাদেরকে এতটুকুই বলব যে, এভাবে প্রত্যেক বিষয়ে উত্তর দিলে ইজ্জত নিয়ে স্থান পরিত্যাগ কারার সুযোগ থাকবে না। তাই শরয়ী নিয়মের উপর প্রশ্ন না উঠিয়ে সরল মনে তা মেনে নিতে শিখুন। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন ও সরল মনে ইসলামী সকল বিধি বিধান মেনে নেওয়ার তৌফিক দান করুন আমীন!
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া মাদানিয়া রওজাতুল উলূম, কুমিল্লা