রাওয়াবি! ফিলিস্তিনের স্বপ্ন গাথা ইতিহাস
ওয়ালি খান রাজু
ফিলিস্তিন নাম শুনলেই আমাদের চোখের পর্দায় ভেসে আসে এক যুদ্ধবিদ্ধস্ত জনপদের নাম। অত্যাধুনিক হোটেল, জাঁকজমক এপার্টম্যান্ট, সবুজে ঘেরা খেলার মাঠ, দামী রেস্টুরেন্ট, বিশ্বের নামী দামী সব ব্র্যান্ডের অথরাইজড শপ নিয়ে অত্যাধুনিক শপিং সেন্টার দ্বারা সুসজ্জিত শহর যে ফিলিস্তিনের মত দেশে থাকতে পারে তা অনেকের কাছেই অকল্পনীয়। আর সেই অকল্পনীয় ধারণাকেই বাস্তবতায় পরিণত করেছেন অদম্য স্বপ্নবাজ ফিলিস্তিনিরা। ৪০ হাজার মানুষে ঘেরা প্রায় ৫০০০ ফ্যামিলি এপার্টম্যান্ট নিয়ে গড়ে উঠা এই শহরটি কোনরকম সরকারী সাহায্য ছাড়াই শুধুমাত্র কতেক ব্যবসায়ীর আর্থিক অনুদানেই গড়ে উঠেছে। রাওয়াবি শহরের জনক যাকে বলা হয় তিনি হলেন ফিলিস্তিনি ধনকুবের বাশার আল মাসরি! এই বাশার আল মাসরি এবং কাতারি প্রতিষ্ঠান এল ডি আরের ১.২ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার ফসল এই রাওয়াবি নামক অনিন্দ্যসুন্দর শহর। এই শহরের সর্বশেষ সংযোজন কিউ সেন্টার নামক বিশাল কমার্শিয়াল এবং শপিং সেন্টার যা ২০১৭ সালের মে মাসে রাওয়াবি শহরের মধ্যভাগেই উদ্বোধন করা হয়। রাওয়াবি শহরের গোড়াপত্তনের “বিহাইন্ড দ্যা সিন” আরো চমকপ্রদ। বাশার মাসরি নামক এক নাবলুসের বাসিন্দা ছোটবেলায় বিভিন্নভাবে ইসরাইলি আগ্রাসনের শিকার হতেন, দখলদার ইসরাইলি সৈন্যদের রাবার বুলেট আর গুলির জবাব দিতে বাশার মাসরি প্রায়ই বন্ধুদের সাথে ইসরাইলি সেনাদের দিকে ছোট ছোট পাথর ছুড়ে মারতেন, বাশার মাসরির ভাষায় তার এই পাথরখন্ড ইসরাইলি সেনাদের শরীরে পৌছানো দূরে থাক বরং তাদের সীমানাতেও যেত না, পাথর ছোড়ার অভিযোগে বাশার মাসরি সর্বমোট আটবার ইসরাইলি সেনাদের হাতে বন্দী হন।
অনেকদিন পর যখন তিনি ফিরে আসলেন পুরোনো জায়গায়। তিনি মনস্থির করলেন, এবারও তিনি ইসরাইলিদের প্রতি পাথর ছুড়বেন তবে তা ভিন্নভাবে। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে তিনি মরক্কো, লেবানন, সউদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা শুরু করেন। বিশ্বের নেইা প্রান্তে পাড়ি জমিয়ে যখন তিনি দেশে ফিরে আসেন তখন তিনি দেখেন বেকারত্ব, দারিদ্র্যতা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তিনি ইসরাইলিদের শক্ত জবাব দেয়া সহ সমগ্র বিশ্বের সামনে অন্যরকম এক ফিলিস্তিন উপস্থাপনের জন্য এই ধনকুবের শুরু করলেন তার বাল্যকালের স্বপ্ন পূরণ করার মিশন। নিজের অর্থ বিত্ত আর কাতারি রিয়েল এস্টের কোম্পানীর সহায়তায় তিলে তিলে গড়ে তুলেন এই স্বপ্ন নগরী এবং আঞ্জাম দেন ১০ হাজার তরুণের নতুন কর্মসংস্থানের।
২০১০ সালে এই শহরের কাজ শুরু হলেও সুবিশাল পরিকল্পনার কাজ এখনো সমাপ্ত হয়নি, একটি অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল স্টেডিয়াম, আকর্ষণীয় ওয়াটার পার্ক নির্মাণ করার কাজ এখনো বাকি রাওয়াবি নগরীর স্বপ্নবাজদের। ফিলিস্তিনের বিভিন্ন প্রান্তসহ সারা বিশ্ব হতেই প্রতি মাসে প্রায় সহ¯্রাধিক পর্যটক এই নগরীতে ঘুরতে আসেন, পরিপাটি এই শহর নিয়ে যেন আনন্দের শেষ নেই রাওয়াবি শহরের বাসিন্দাদের, তাদের মতে তাদের এই রাওয়াবি শহর হার মানিয়েছে দুবাই, সিংগাপুর, আমেরিকা, ব্রিটেনের যেকোন শহরকেও। ফিলিস্তিনিদের ভাষায় রাওয়াবি শহর তাদের জন্য জাতীয় গর্ব।ইসরাইলি বোমার বিরুদ্ধে এটি একটি শক্ত জবাব। ইসরাইলি গণমাধ্যম সহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন গণমাধ্যম ফিলিস্তিনীদের যেভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী হিসেবে চিত্রায়িত করেন তাদের জন্য ফিলিস্তিনী ধনকুবের, প্রকৌশলী, শ্রমিক সর্বোপরি ফিলিস্তিনী জনসাধারণের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই অত্যাধুনিক রাওয়াবি নগরী যেন এক মোক্ষম জবাব। আর রাওয়াবি নগরীর সুউচ্চ ভবনের উঁচুতে পতপত করে উড়া ফিলিস্তিনী পতাকা যেন ফিলিস্তিনের সুমহান ইতিহাস আর সমুজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথারই জানান দেয়।