‘একটি মোমেন্টাম পাওয়ার আশায় বাংলাদেশ’
আশিক রহমান : কয়েক দফায় দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার এ মানুষগুলো একরকম অসহায়, নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের বাংলাদেশে আসা। এই বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমাদের জন্য চাপ হয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে। আছে নিরাপত্তা শঙ্কা। সুনির্দিষ্ট একটা জায়গা এখন তাদের রাখা হলেও কখন কে কোনদিকে যায়, কতক্ষণ দেখে রাখা যাবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয় কি না এ নিয়েও আমাদের সব সময় শঙ্কার মধ্যে থাকতে হবে। অর্থনৈতিক দিকও দেখতে হবে। অধিক জনসংখ্যার ভারে এমনিতেই আমরা নানা সমস্যার সম্মুখিন হই। তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের বয়ে বেড়ানো আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওয়ালিউর রহমান।
তিনি বলেন, সহজ নয়, তবু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এটি সফলতার সঙ্গে করে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে এখানে জায়গা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এ সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃঢ়তা, সাহসিকতা নন্দিত হয়েছে। সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পেরেছে বলেই মিয়ানমার চাপে পড়েছে। এবং অবশেষে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তিতে সই করেছে দুই দেশে। সপ্তাহে ১৫০০ জন এবং দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, প্রতি সপ্তাহে ১৫০০ জন করে গেলে কীভাবে দুই বছরে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ হবে। এটা আদৌ শেষ হবে কিনা, মিয়ানমারের কু-কৌশলের কথাও বলছেন কেউ কেউ। কিন্তু আমি এখানে তাদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বুঝতে হবে ওখানকার বাস্তব পরিস্থিতি। দীর্ঘদিন যে দেশটিতে সেনা শাসন জারি ছিল, যেখানে গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হয়েছে মাত্র, তাও সেনাবাহিনীর নানা বাধা-নিষেধ সত্ত্বেও গণতন্ত্র এখন ওখানে বহাল। অনেক সমস্যা ওখানে আছে, আমাদের বুঝতে এটা। সেনাবাহিনী যেমন আছে, রোহিঙ্গা বিরোধী বৌদ্ধরাও। প্রবল রোহিঙ্গা বিরোধী মত বিদ্যমান। এসব বিরুদ্ধমত মোকাবিলা করে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া অত সহজ নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যে চুক্তি হয়েছে তাকে পারফেক্ট চুক্তি মানতে রাজি নন অনেকেই। তারা হয়তো কিছুটা সঠিক, কিন্তু পুরোটা নয়। কারণ পৃথিবীর কোনো চুক্তিই পারফেক্টভাবে হয় না। চাওয়ার সঙ্গে হয়তো অনেক সময় প্রাপ্তির যোগফল থাকে না। তবে শুরুটা করতে পারলে পরবর্তীতে তা এগিয়ে নেওয়া যায়। রোহিঙ্গা চুক্তির ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। শুরুটা তো হচ্ছে, হোক না শুরটা। আমাদের একটা মোমেন্টাম দরকার। একটা মোমেন্টাম পেয়ে গেলে মিয়ানমারকে আরও চাপ দেওয়া যাবে। যাত্রা শুরু হোকÑ আমাদের একটু ধৈর্য ধরতেই হবে। আমাদের আশা একটা মোমেন্টাম, এটা পেয়ে গেলে সব রোহিঙ্গা ফেরত যাবে, যেতে তাদের হবেই।
এক প্রশ্নের জবাবে ওয়ালিউর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতিসংঘ যুক্ত না থাকলে যুক্তরাজ্যসহ অনেকেই তাদের সমর্থনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কথা বলছেন। আমার কথা হলো তারা তো আমাদের সঙ্গে রয়েছেনই। তাদের চাপটা অব্যাহত রাখুক। জাতিসংঘও তো রোহিঙ্গাদের পাশে আছে। আমরা তো পৃথিবীর সবার সহযোগিতা চাই এই ইস্যুর সুষ্ঠু সমাধানে। এটা তারা অব্যাহত রাখবেনই বলেই আমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, সরকারের কূটনৈতিক সফলতা অবশ্যই রয়েছে। প্রথম দিকে সরকারের মধ্যে একটা আড়ষ্ঠতা থাকলেও পরবর্তীতে তা কেটে গেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, পরবর্তীতে সারাবিশ্বকে এ সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করা, সমাধানে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার এটা করেছে ভালোভাবেই। তা করতে না পারলে বিশ্ব কীভাবে জানত এত বড় সমস্যা আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। কীভাবে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াত। রোহিঙ্গাদের পাশে এখন সারাবিশ্ব। মিয়ানমারের উপর ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। আশাহত হওয়ার কিছু নেই, বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন রাষ্ট্রক্ষতায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান অবশ্যই হবে। তার উপর আমাদের বিশ্বাস রাখা উচিত।