জামায়াতকে ছাড় দিতে প্রস্তুত, আ. লীগকে নয়, ওবায়দুল কাদের কী বলবেন!
বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকার মানে ভালো রেজাল্ট করা নয়। বইয়ের বাইরেও বিশাল জ্ঞানভাÐার আমাদের রয়েছে। কিন্তু নগরীর কিছু কিছু মা-ই এরকম চিন্তা করেন, বাচ্চা আমার ‘সেই রকম’ রেজাল্টই করবে। শুধু নগরী বলবো কেন, মফস্বল শহরেও। কিন্তু পরীÿার ফল প্রকাশের পর দেখা গেলো, রেজাল্ট আশাতীত নয়, অন্য রকম। এটা কী বাচ্চার দোষ। না, দোষ নয়; কিন্তু মা মানতেই রাজী নন। উল্টো ছেলে-মেয়ের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ অমঙ্গলই ডেকে আনে পরিবারে। এ ধরনের খবর আমরা প্রায়ই গণমাধ্যমেও পাই। সম্প্রতি এমন একটি জরিপও একটি বেসরকারী সংস্থা তুলে এনেছে যা কিছুদিন পর তারা প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে। বলতে চাই, একইরকম রাজনীতিও, বুঁদ হয়ে থাকার রাজনীতি। যে রাজনীতি কীভাবে ÿমতায় যাওয়া যায়; ÿমতার সিঁড়িতে পা দেওয়া যায়Ñ কেবল এটাই শেখায়। রাজনীতিতে ভালো রেজাল্টের চেয়ে ÿমতার স্বাদ নেওয়ার দুষ্ট প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। পোস্টারে নেতার ছবি ছাপিয়ে কর্মীর ছবি। পাতিনেতার ঢাউস মার্কা ‘ফটো।’ খ্যাতিমান ছাত্রনেতা থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথাটি প্রায়ই বলে থাকেন। অপ্রিয় হলেও অনেক সত্য কথা তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়ে থাকে। খুবই পরিশ্রমী ব্যক্তিত্ব। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সবধরণের কাজ শেষে দলের নেতা-কর্মীর খোঁজ রাখার মতো কঠিন কাজটি করার জন্য সারাদেশ ঘুরে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়েই দÿতা প্রমাণ করেছেন। অবাক হয়ে যাই তার স্মরণশক্তির প্রখরতা দেখে। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নির্বাচনের কথা এখন অনেকে স্বীকার করেন। একসময় লিখেছিলাম সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন দরকার। ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করে একবার না হয় দেখা হোক! কী তীব্র সমালোচনা আমার ওই লেখাটির। যাই হোক, দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ‘কাউয়া, ফার্মের মুরগী, হাইব্রীড….’ এসব শব্দ উচ্চারণ করায় কিছু নেতার গায়ে আগুন লেগেছিল, কথাগুলো। পোড় খাওয়া এই নেতা কী ‘একবিন্দু’ মিথ্যা বলেছেন? ÿমতাসীন দলের নেতা, সংগঠনের নেতা হয়ে কেউ কেউ ভুলেই গিয়েছিলেন নিজেদের; কোথায় ছিলেন তারা আর এখন কোথায়! সেসব নেতাকর্মী কী জানেন না আওয়ামী লীগকে কীভাবে বিপদে ফেলা যায়Ñ এটাই একমাত্র কামনা অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের। এমন কী বাম ঘরানার অনেকেই সরকারের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও রাজনীতিতে গণেশ উল্টোনোর সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস পাল্টে যায়। তারা ‘কচি খোকার’ মতো ‘দিকনির্দেশকের’ ভূমিকায় নামেন। স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসন আমল এদেশের মানুষ দেখেছে। আসম আব্দুর রবকে তখন গৃহপালিত বিরোধীদলের নেতা দেখেছে। তিনিই আবার ’৯৬-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। আজ যদি আব্দুর রবের কণ্ঠ শুনি তাহলে কি বিশ্বাস হওয়ার কিছু আছে তিনি ‘একদা’ শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। এরশাদের পতনের পর দেশ চালায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন গুলিবিদ্ধ হলে তৎকালীন সরকারপ্রধান খালেদা জিয়া ও রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের ¯েœহে ও কৃপায় তিনি সুচিকিৎসা পান। তার আরোগ্যলাভে তার পরিবারের বাইরেও আওয়ামী লীগ খুশি হয় বেশি। সেই মেনন এখন মহাজোট সরকারের অংশীদার ও মন্ত্রী। ‘রাজনীতিতে পেছনে ফেরার সুযোগ নেই’ কথাটি যারা বলে থাকেন তাদের সঙ্গে আমি নেই। দার্শনিক বার্টন্ড রাসেলের কথা, ‘অতীত থেকে শিÿা নেওয়ার কথা হয়তো আমরা ভুলে যাই।’ আজ এটাই বা¯Íবতা : অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে ছাড় দিতে প্রস্তুত কিন্তু আওয়ামী লীগকে নয়। অথচ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে সর্বাগ্রে মাথা উঁচু করে তোলার জন্য দলটি একমাত্র কিংবা সবচেয়ে বেশি নিবেদিত। আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তির প্রধান কামনা-বাসনা, ধ্যান-জ্ঞান, কৌশল-যুক্তি কিভাবে মুক্তিযুদ্ধেরগোত্রকে শায়ে¯Íা করা যায়। দুর্নীতির ‘বরপুত্র’রা স্বপ্ন দেখছেন সামনে তারা ÿমতায় আসছেন, এরপর ঢাকার গুলশান-বনানীতে আবার ক্রিকেট খেলবেন। যদি কোনো কারণে বিএনপি সমমনারা ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত করে কূটচালে সফল হতে পারে তাহলে বাংলাদেশ আবার পেছন দিকে ছুটবে, সামনে নয়। কথায় আছে নাÑ ভূতেরা পেছন দিকে চলে।
কেবল আরেকবার ÿমতার স্বাদ ফিরে পেতে চায় বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ বিরোধীরা। যথার্থই বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে আর মুক্তিযুদ্ধ পাকি¯Íানের দিকে ধাবিত হবে’ বলে তিনি সতর্ক করেছেন একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন কাদের’।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গল্পকার
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ