বিশ্ব পুরুষ দিবস নিয়ে ভাবনা মেজর (ডা.) খোশরোজ সামাদ
১। গত ১৯ নভেম্বর নীরবে চলে গেল বিশ্ব আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। শুনে অনেকে কুঁচকে গিয়েছেন কি না জানি না! খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই দিনকে পুরুষ দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
২। সারা দুনিয়ায় পুরুষ ও নারীর আত্মহত্যার অনুপাত ৩ : ১। খোদ রাশিয়াতে এই হার ৬ : ১। অর্থাৎ, ৭ জন আত্মহত্যাকারীর মধ্যে ৬ জনই পুরুষ। তাই, গতবার পুরুষ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘পুরুষের আত্মহত্যা প্রতিরোধ।’ নারীর ইস্ট্রোজেন হরমোন হৃদরোগসহ যেমন অনেক রোগের সুরক্ষা দেয় তেমনই পুরুষের ‘এন্ড্রোজেন’ হরমোন অনেক রোগের দ্রুত নিরাময় না হওয়ার কারণ। প্রায় অধিকাংশ রোগে পুরুষরাই বেশী আক্রান্ত!
৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে নারীর গড় আয়ু ৭৪ এবং পুরুষের ৬৯ বছর। বিভিন্ন কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা দুনিয়ায় অন্তত ৫০টি দেশে পুরুষ দিবস পালন করছে। ৪। কেবলই নারীবাদী প্রচারণায় নর-নারীর পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর ভালবাসার সম্পর্ককে অবিশ্বাসে ঠেলে দেয়া হয়েছে। পুরুষদের দায়ী করা হয়েছে। অথচ অনেক সময়ই নারীর পরকীয়া প্রেমের বলি শুধু স্বামীই নয়, শিশু সন্তানকেও হতে হয়েছে।
৫। দরিদ্র কবি জীবনানন্দ দাশের সুন্দরী স্ত্রী লাবণ্য যে মানসিক অত্যাচার করেছিল সে কাহিনী অনেকের জানা। যৌতুক আইনের অপব্যবহার করে নিরপরাধ স্বামীকে জেলে পাঠানোর গল্প বহুবার মিডিয়ায় এসেছে। ক্ষমতাশালী আত্মীয়ের মেয়ে গরীব স্বামীকে বারবার অপমান, চাকরিক্ষেত্রে ক্ষতি করবার অনেক ইতিহাসই অনেকের জানা। শুধু স্বামীই নয়, তার মা-বাবা-ভাই-বোনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার ইতিহাস বাংলা সাহিত্যের পাতায় পাতায়।
৬। মিথ্যা যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে সহকর্মীকে সামাজিক, পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত করে ক্যারিয়ার ধ্বংস করার অসংখ্য ভয়াবহ ইতিহাস বারবারই আমাদের চোখে পড়ে। উদ্ধত কিছু নারী বিয়ের পরপরই কূটকৌশলে স্বামীকে ‘হাতের মুঠোয়’ রাখাার জন্য ঘৃণ্য কায়দায় ননদিনী, ভাবী এমনকি শ্বাশুড়িকে স্বামীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করায়। ফলে স্বামী ঘর ঠিক রাখবে, না মায়ের দিক ঠিক রাখবেÑ এই দ্বন্দ্বে তীব্র মানসিক কষ্টে পড়েন। এই চিত্রও চিরায়ত বাংলার পুঁথিতে উঠেছে। বলা হয়েছে ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন/ যদি গো ছিন্ন হয় নারীরও কারণ।’
৭। মনে রাখতে হবে পুরুষ নারীরই সন্তান, ভাই, স্বামী, পিতা। পরিবার , সমাজ, রাষ্ট্রে পুরুষের ইতিবাচক দিককে আরেকবার উপলব্ধিতে আনাই পুরুষ দিবসের লক্ষ্য। তাই পুরুষকে নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা না করে পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বিশেষ কল্যাণকর। মানবিক অনুভূতি নিয়ে পুরুষকে চিনুন, তাঁর সমস্যা জানুন। এটাই এই দিবসের প্রত্যাশা।
লেখক : উপ অধিনায়ক, আর্মড ফোর্সেস ফুড অ্যান্ড ড্রাগস ল্যাবরেটরি।
ই-মেইল : শযড়ংযৎড়ু@ুধযড়ড়.পড়স