প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফর : লাভের হিসাব কষছে আওয়ামী লীগ
জয়ন্ত আচার্র্য : ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ৫ দিন সফরের পর গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ত্যাগ করছেন। এ সফরে তিনি পেয়েছেন সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় প্রটোকল। সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই বছরে প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলোচনা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রণব মুখার্জির এ সফরকে ইতিবাচক ভাবে দেখছে। তারা মনে করছে এ সফরের ফলে সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপরও এ সফর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তার এই সফর থেকে লাভের হিসাব কষছে আওয়ামী লীগ।
ভারতের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বাংলাদেশ সফর করেছিলেন প্রণব মুখার্জি। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে তিনি প্রথম ঢাকায় এলেন। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি হয়েও ভারতের রাজনীতিতে প্রণব মুখার্জির প্রভাব বেশ। সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তাকে বেশ গুরুত্ব দেন। তার নিজের দল কংগ্রেসে রয়েছে বেশ প্রভাব। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তিনি ওয়াকিবহাল। ফলে সংসদ নির্বাচনের এবছর তার সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সকল মহল এ সফরের সফলতায় বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, প্রণব মুখার্জি খুব মুগ্ধ হয়েই ঢাকা ছেড়েছেন।
প্রণব মুখার্জি নিখিল ভারত বঙ্গ সম্মেলনের ১০ বছর ধরে সভাপতি ছিলেন। নিখিল ভারত বঙ্গ সম্মেলন ও ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি যৌথভাবে ঢাকায় আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে আয়োজন করে। মূলত এ সম্মেলনে সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি ১৬ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন। ৫ দিনের সফরকালে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। ধানম-ি ৩২ নম্বরে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মঙ্গলবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে যান। মাস্টারদা সূর্য সেনের জন্মভিটা পরিদর্শন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি গ্রহণ করেন ও বক্তব্য দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হ্ািসনার সঙ্গে সাক্ষাতে বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সংগ্রামী নেতা বলে অভিহিত করেন। বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের এগিয়ে চলার প্রশংসা করেন।
সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল বর্তমান সংবিধান অনুসারে করতে চায়। এ বিষয় কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাদের লক্ষ্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কোনো অবস্থাতে যেন কূটনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে। এ কারণে আওয়ামী লীগ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ ভারতের সকল রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নিবিড় সম্পর্ককেও কাজে লাগাতে চায় আওয়ামী লীগ। এ সমীকরণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে রাখতে চায় চাপে।
প্রণব মুখার্জির সফর প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড, আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তার এ সফরে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু বলেন, ভারতের বর্ষিয়ান রাজনৈতিক নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশে সফরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তরুণ প্রজন্ম উজ্জীবিত হয়েছে। আমরা আশা করি অতীতের মতো আগামীতেও দেশের প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক মানুষের পাশে তিনি থাকবেন।
লেখক : বিশেষ সংবাদদাতা, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি