সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু অনিবার্য শিশু স্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকি রোটা ভাইরাস
রিকু আমির : বিশ্বব্যাপী শিশু ও নবজাতকের মারাত্মক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ রোটা ভাইরাসের প্রভাব। যাতে আক্রান্ত হয়ে চলতি জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার শিশু বাংলাদেশ উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর চাঁদপুর মতলব হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে শিশুদের রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। বস্তি ও গ্রামীণ এলাকার পাশাপাশি অভিজাত এলাকার অনেক শিশুর রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত এ ভাইরাস মুখ দিয়ে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং অন্ত্রে ছড়ায়। আক্রান্ত শিশুর মলে রোটা ভাইরাসের অনেক জীবাণু থাকে। নোংরা হাত এবং খেলনা ও ডায়াপারের মতে শিশুর নাগালে থাকা বিভিন্ন বস্তুর মাধ্যমে খুব সহজে রোটা ভাইরাস ছড়াতে পারে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৪ লাখ শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এসব শিশুর অধিকাংশের বয়স ৩ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারলে মৃত্যুর আশঙ্কা আছে।
আইসিডিডিআরবি-এর গবেষণা প্রতিবেদনেও একই কথা উল্লেখ আছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরও এ ভাইরাসের প্রভাবে প্রাণহানির বিষয় তুলে ধরেছে। অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. তানিয়া তাহমিনা বলেন, রোটা ভাইরাস নবজাতক ও শিশুদের ডায়রিয়াজনিত রোগ ও পানিশূন্যতা প্রধান কারণ। আক্রান্ত হওয়ার ২-৩ দিন পর সাধারণত এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর মারাত্মক ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, জ্বর ও পেট ব্যাথা হয়। রোটা ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকলেও পানিশূন্যতা রোধে বারবার পানি খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়।
আইসিডিডিআরবি-এর তথ্য মতে, ডায়রিয়াজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এবং ৬ থেকে ১১ মাস বসয়সী শিশুর প্রায় ৫০ শতাংশ রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত।
লাইন ডিরেক্টর ডা. তাহমিনা বলেন, ডায়রিয়াজনিত অন্য রোগের চেয়ে রোটা ভাইরাসের চিকিৎসা সম্পূর্ণ আলাদা। আবার রোটা ভাইরাস টিকার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। ভাইরাসগুলোর প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে। এ রোগ প্রতিরোধে এখন দুটি নতুন রোটা ভাইরাস টিকা আছে।
রোগতত্ত¦, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্র (আইইডিসিআর) এর তথ্যানুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডায়রিয়াজনিত অন্যান্য রোগ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে রোটা ভাইরাসের হুমকি এখনো অনেক বেশি। ২০১২ সাল থেকে সরকারি কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী ৭টি বিশেষায়িত হাসপাতালে মূলত এ রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা দেয়া হয়। বর্তমানে রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে রোটারিক্স ও রোটাটেক নামের দুটি টিকা রয়েছে। বাজারে রোটাটেকের দাম প্রায় এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা এবং রোটারিক্সের দাম ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম