ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে জায়গা পেতে যাচ্ছে জব্বরের বলিখেলা
স্বপ্না চক্রবর্তী : জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর কাছে জব্বরের বলিখেলাকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণার আবেদন করতে যাচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। অনুমোদিত হলে বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণ, জামদানি শাড়ি, বাউল গান আর মঙ্গল শোভাযাত্রার পরে ইউনেস্কোর দফতরে এটি একটি বড় প্রাপ্তি হবে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। এছাড়াও চলতি বছর থেকে জব্বরের বলিখেলার আয়োজনে সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
এদিকে, বলিখেলার আয়োজনে সম্পৃক্ত হতে খেলার আয়োজকদের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ ব্যাপারে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এটি ছিল মূলত বলিখেলা বা একটি কুস্তি প্রতিযোগিতা। কিন্তু ১১০ বছর পার করে এখন আমরা দেখছি বলিখেলা বা কুস্তির চাইতে এটিকে ঘিরে একটি বড় মেলার আয়োজন হচ্ছে প্রতিবছরই। এই ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি এটিকে আরো চাঙ্গা করতে চাই আমরা। তিনি বলেন, বলিখেলাকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে স্বীকৃতি পাবার জন্য আবেদন করা হবে। এছাড়া এই খেলা আয়োজনের সঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ও যুক্ত হতে যাচ্ছে শিগগিরই।
সাংবাদিক করেন সাংবাদিক শরীফা বুলবুল বলেন, চট্টগ্রামের মেয়ে বলে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। বলিখেলা শুধু চট্টগ্রাম কেন, সারাদেশের নাগরিকদের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব রাশেদ রউফ বলেন, আমাদের দেশে যে কয়টি ঐতিহ্যপূর্ণ ঘটনা রয়েছে তার মধ্যে জব্বরের বলি খেলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি শুধু একটি খেলা নয়। এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বন্ধন। যদি এটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায় তাহলে এর চাইতে আনন্দের কিছু হতে পারে না।
বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বলিখেলা নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলিখেলার সূচনা করেন তিনি। ব্যতিক্রমী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য বৃটিশ সরকার আবদুল জব্বারকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। তবে তিনি সেটা প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে বৃটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও তৎকালীন বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও বলী কিংবা কুস্তিগিররা এসে এই খেলায় অংশ নিতেন। এরই ধারাবাহিকতায় এখনও প্রতিবছর লালদীঘির মাঠে বৈশাখের ১২তারিখে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার আশেপাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসে মেলা। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম