জাতিসংঘের তদারকিতে রোহিঙ্গাদের জন্যে সেফ জোন প্রতিষ্ঠার আহবান
ফারমিনা তাসলিম : মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের তদারকিতে একটি সেফ জোন প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অধ্যাপক ড. লা মিন্ট। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিজদেশে ফেরাতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। তা না হলে এ প্রচেষ্টার কোনো মূল্য নেই।
অধ্যাপক লা মিন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মিয়ামারে রোহিঙ্গাদের জন্যে শান্তি রক্ষা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি সেফ জোন প্রতিষ্ঠার জন্যে জাতিসংঘকে অনুরোধ করার আহবান জানান। সেফ জোন না হলে আমরা বার্মা সরকারের হাতে শেষ হয়ে যাব, এমন মন্তব্য করেন অধ্যাপক লা মিন্ট।
এক সাক্ষাতকারে অধ্যাপক লা মিন্ট বলেন, আমরা ৩ মিলিয়ন মানুষ ছিলাম। আমাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চলছে। মিয়ানমারে ফিরে গেলে ফের হত্যাযজ্ঞ শুরু হতে পারে। রোহিঙ্গাদের ওপর ‘হলোকাস্ট’ ঘটনানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের কোনো জাতিগত পরিচয় বা নাগরিকত্ব নেই। স্ট্যাটাস না থাকার ফলে আমাদের মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে সমস্যা হচ্ছে, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এসব বিষয় অনুভব না করলে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা বৃথা।
অধ্যাপক লা মিন্ট বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জায়গা জমি কিছুই নেই। সব কেড়ে নেয়া হয়েছে। এগুলো আর ফেরত দিবে না। দ্বিতীয়তঃ আগে যেমন বার্মা সরকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ব্যবহার করেছে এখনও ঠিক তেমন ব্যবহার করবে। শরণার্থী শিবিরে আটকে রাখবে, পড়াশোনা করতে দিবে না, চাকরি দিবে না। তারা প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। যদিও তারা যায় ভলেন্টিয়ার হিসেবে যাবে, তারা তাদের মনের খুশি মতো যাবে। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে প্রোটেকশন, ওয়েলফেয়ার উন্নয়ন, কমিউনিটি উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। যারা ফিরে যাবে ৯০-এর দশকের আইন অনুযায়ী তাদেরকে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে অনেক বড় আইন হচ্ছে রেসিজম ’ল।
চীন-ভারতের মতো কোন কোন দেশ বলছে, তারা রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে বাড়ি-ঘর বানিয়ে দিবে। যাতে তারা ফিরে সেখানে থাকতে পারে। জবাবে লা মিন্ট বলেন, এগুলো সব রেসক্টিটেট। এগুলো আসলে কিছুই না। তারা বার্মাকে ক্লায়েন্ট হিসেবে ডিল করছে।
বাংলাদেশ সরকার এ প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করতে চায়। এ প্রসঙ্গে লা মিন্ট বলেন, বার্মা এটাকে গ্রহণ করছে না। তারা বলছে প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই বছর সময় লাগবে। এখানে সমাধান হলো জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি ও ঘরবাড়িতে ফিরতে দেওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারা যাতে মৌলিক অধিকার নিয়ে বাঁচার সুযোগ পায় সে সুযোগ সৃষ্টি করা।
লা মিন্ট বলেন, আমাদের ওপর এধরনের নির্যাতন প্রথম নয়। গত ৪০ বছরে এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, তাদের বাড়ি ঘরে আগুন, লুটপাট পঞ্চমবারের মত হল। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন