অপরাধ ঠেকাতে সুন্দরবনে ব্যবহার হবে ‘সাইবার ট্র্যাক’
খুলনা প্রতিনিধি : সাইবার ট্র্যাকার বন্যপ্রাণী পাচার, অবৈধভাবে বনে প্রবেশ, চোরাচালান ও বনজ সম্পদ ধ্বংস ঠেকাতে সুন্দরবনে এবার ‘সাইবার ট্র্যাক’ (বিশেষ যন্ত্র) ব্যবহার করা হচ্ছে। এই যন্ত্রই বলে দেবে বনের কোথায় কোন অপরাধী কী অপরাধ করছে। তারপরই সহজেই অপরাধীদের ধরা হবে। বনবিভাগের বন সংরক্ষক (খুলনা) আমির হোসেন চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিশেষ নিরাপত্তা অভিযান শুরু হচ্ছে। সুসজ্জিত ও অত্যাধুনিকভাবে বনের দুই বিভাগে গতকাল মঙ্গলবার থেকে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
স্মার্ট পেট্রোলিং অব দ্য রিজার্ভ ফরেস্টের পরিচালক ও বন সংরক্ষক (খুলনা) আমির হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, ‘সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে ৮টি টিম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রতি মাসে ২০ দিন করে এ অভিযান চালাবে। অভিযানে সাইবার ট্র্যাক ব্যবহার করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে সাজা দেওয়া হবে। যন্ত্রটি সুন্দরবন বিভাগের খুলনা অফিসে বসে মনিটরিং করা হবে।’ বন বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সুন্দরবনের এ অভিযানে দায়িত্বে থাকবে ৮টি টিম। এসব টিমের মধ্যে পূর্ব সুন্দরবনে অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন চাঁদপাই রেঞ্জের আওতায় নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের ওসি মিজানুর রহমান ও মরাপশুর ফরেস্ট ক্যাম্পের ওসি শাহাদাৎ হোসেন। আর শরণখোলা রেঞ্জের আওতায় থাকবেন কচিখালী ক্যাম্পের ওসি আলমগীর হোসেন ও বগি ক্যাম্পের ওসি সাইফুল বারী। এদিকে পশ্চিম সুন্দরবনের অভিযানে দায়িত্বে থাকবেন সাতক্ষীরা রেঞ্জের (সদর) স্টেশন কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন ও কৈখালী ক্যাম্পের ওসি মো. মিঠু তালুকদার। আর খুলনা রেঞ্জের আওতায় দায়িত্বে থাকবেন বজবজা ক্যাম্পের ওসি মো. সাইফুর রহমান ও খাসিটানা ক্যাম্পের ওসি মো. কামরুল ইসলাম।’
এক প্রশ্নের উত্তরে স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের পরিচালক বলেন, ‘সাইবার ট্র্যাক নিয়ে এসব কর্মকর্তা অভিযানের দায়িত্বে থাকাকালীন কোনো অনিয়ম উদাসিনতা এবং অপরাধীদের সঙ্গে হাত মেলালে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এজন্য তাদের কঠোর নজরদারিতে রাখবেন বন বিভাগ গঠিত বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা।’
বন বিভাগের (পশ্চিম) সূত্র জানায়, বন বিভাগের লোকবল, নৌযান ও আধুনিক অস্ত্রের অভাবে সুন্দরবনে অভ্যন্তরে কিছু কিছু অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। যদিও তাদের যে পরিমাণ লোকবল রয়েছে তা দিয়ে অপরাধীদের ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সুন্দরবন কেন্দ্রিক চোরাচালান, দস্যু দমন, বন্যপ্রাণী পাচাররোধ এবং বনজ সম্পদ ধ্বংস ঠেকানোর মতো অপরাধ শূন্যের কোঠায় আনা যায়নি। যে কারণে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশির আল মামুন বলেন, গোটা সুন্দরবনে যেকোনো অপরাধ দমনে পর্যাপ্ত লোকবল বন বিভাগে নেই। এমনকি বনের অভ্যন্তরে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য আধুনিক নৌযানও নেই। বনকর্মীদের হাতে এখনও সেই মান্ধাতার আমলের অস্ত্র। এগুলো দিয়ে পুরোপুরি সুন্দরবনে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তাই স্মার্ট পেট্রোলিং পদ্ধতি হাতে নেওয়া হয়েছে। এখন অবৈধভাবে বনের ভেতরে প্রবেশ করে মাছ শিকার, বনজ সম্পদ ধ্বংস ও বন্যপ্রাণী পাচার করার চেষ্টা করলে তাদের সেই মুহূর্তেই স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা মামলা দিয়ে জেলে পাঠাবেন।
বনের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪০টি দেশের রক্ষিত এলাকায় স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে এ অভিযান চলছে। তবে তার মধ্যে জলজ পরিবেশে বাংলাদেশের সুন্দরবন একটি মডেল।
স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের দেখভালের দায়িত্বে থাকা এবং সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের হিসাবরক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবন কেন্দ্রিক অপরাধ ঠেকাতে সুন্দরবনে শুরু হওয়া স্মার্ট পেট্রোলিংয়ে পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে প্রতি মাসে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকা অভিযানে নৌযানের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে।