কারণ ছাড়াই হেলে পড়ছে ভবন, ঝুঁকিতে রাজধানীবাসী
মবিনুর রহমান : রাজধানীতে ভূমিকম্প ছাড়াই একের পর এক ভবন হেলে পড়ার ঘটনায় আতঙ্কিত নগরবাসী। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীবাসীর মাঝে আতঙ্ক তৈরি করে আসছে। কারণ এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি রাজধানীর লালবাগে একটি ৫ তলা ভবন হেলে পড়ায় সেই এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভবনটি থেকে লোকজন সরিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) তালা ঝুলিয়ে দেয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৬টি ভবন হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
গত বছরের এপ্রিলে রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের কাছে অনন্ত এ্যাপারলেস নামে একটি ১৫ তলা ভবন হেলে পড়ে। ২০১৬ সালে কদমতলী মোহাম্মদবাগে চৌরাস্তায় ও রায়েরবাগে একই দিনে ২টি ভবন হেলে পড়ার ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে তেজগাঁওয়ে একটি গার্মেন্ট ভবন হেলে পড়ে। বিজয় সরণির কুপারন ভবনের পাশে অবস্থিত ওই ভবনটি হেলে পড়ার কারণে আশপাশের ভবনগুলোতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে একই বছর মোহাম্মদপুর এলাকায় তাজমহল রোডে ৪ তলা ভবন হেলে পড়ার ঘটনা ঘটে। ২০১৫ সালে যাত্রাবাড়ীতে একটি ৭ তলা ভবন হেলে পড়ার ঘটনা ঘটে। একই বছর ২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পে ১০টি ভবন হেলে পড়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতর সূত্রে জানা যায়।
২০১১ সাল থেকে জাইকার সহযোগিতায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর পরিচালিত ৪ বছর মেয়াদি এক জরিপে দেখা যায়, গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে নির্মিত ঢাকার ২ হাজার ১৯৩টি সরকারি ভবনের ৫৯ শতাংশই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অধিকতর ঝুঁকিতে রয়েছে। ভবনগুলোর বয়স ২০ বছরের বেশি ও ইটের গাঁথুনিতে তৈরি।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্র জানায়, রাজধানীতে এখন ভবনের সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার। গড় হিসাব করে বলা হয়, ঢাকায় ৭২ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। কিন্তু কোন ৭২ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, এগুলো কোথায় অবস্থিত, তা মন্ত্রণালয় বলতে পারবে না।
রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম জানান, রাজধানীতে রাজউকের আওতাভুক্ত এলাকায় বর্তমানে ভবনের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। ঢাকার খসড়া পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে রাজউকের পক্ষ থেকে প্রতিটি ভবনের অবস্থা সম্পর্কে একটি করে প্রতিবেদন তৈরির কথা ছিল। তা করা হয়নি। করা হলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা হয়ে থাকত।
নগর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইন না মানার প্রবণতা, দুর্নীতি-লোভের কারণেই ঢাকা আজ এতটা ঝুঁকিপূর্ণ। যথাযথভাবে মাটি পরীক্ষা না করা, ফাউন্ডেশন অনুযায়ী বিল্ডিং তৈরি না হওয়া এবং ইট, বালু, সিমেন্ট, রডের সাজুয্য ও সংমিশ্রণ যথাযথ না হওয়ার কারণে দুর্বল ভিতের ওপর দুর্বল ভবন তৈরি হয়। এ কারণেই ভবনগুলো এমনিতেই হেলে পড়ছে। এছাড়াও রাজউকের একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে বাড়ির মালিকরা তাদের ইচ্ছামতো ভবন তৈরি করেছেন। নকশায় ৫ তলার অনুমোদন থাকলেও গড়ে তোলা হয়েছে ৭-৮ তলা। সম্পাদনা : আনিস রহমান