মারমুখো আওয়ামী-বিএনপি; কাকের গোশত কাকে খায়অজয় দাশগুপ্ত
, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে
অকারণে হোক আর কারণে হোক আবার তেতে উঠেছে তারা। কারা? আওয়ামী লীগের দ্রোহীরা। তাদের হাতে মিডিয়ার ভাষায় নাজেহাল সম্পাদক অবশ্য বললেন, কর্মীরা বিজয় মিছিল করলেও মিডিয়া নাকি তা নিয়ে অন্য কথা বলে। একথা বলতে না বলতে আবারও তোপের মুখে পড়লেন ওবায়দুল কাদের। এবং আমরা ভিডিও ফুটেজে যা দেখলাম তাতে মনে হবে এমন বিজয় মিছিল বা আনন্দ হওয়ার চাইতে না হওয়াটাই ভালো। মূল বিষয় আড়াল হলে কারো লাভ নেই। মূল বিষয় কিন্তু কর্মীরা সাফ সাফ বলে দিয়েছেন। তারা দেখছে তাদের কোনো চাওয়াই মূল্য পাচ্ছে না। তাদের ভাষায় টাকা আর পাওয়ার গেমে তারা বাদ পড়ে সামনে চলে আসছে সব দলছুট বা দলের না এমন মানুষজন। এ কথা কি আসলে মিথ্যা?
কে না জানে সরকারি দল করে এমন একদল মানুষ সব সময় ক্রিম খায়। এরা থাকে আড়ালে আবডালে। সুখের সময় পাবেন দুঃখ বা কষ্টের সময় উধাও এরা। আওয়ামী লীগের সহায় ও সম্বল মূলত তার তৃণমূল কর্মীরা। সেই বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে এরাই দলকে চাঙ্গা করে রেখেছে। আজ যখন দল বহু বছর ধরে গদিতে তাদের আসন একটু একটু করে টলছে। এখন এমন হাল সে জায়গাটা হয়ে গেছে প্রতিবাদের। আশ্চর্য কথা বলতে পছন্দ করেন এমন সম্পাদকও তা মানলেন না। অথচ কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, দলে কাউয়া ঢুকেছে। কাউয়া এখন কাউয়ার গোশত খেলে তিনি কিভাবে চোখ বুজে থাকবেন?
আমি সরেজমিনে দেখেছি দলের অবস্থান আগের মতো নেই। সুবিধাভোগীদের জ্বালায় অতিষ্ঠ কর্মীরা কোনোভাবে টিকে আছে। আর মানুষের মনে মনে নেগেটিভ প্রভাব ফেলছে স্বার্থপরেরা। সকালের কথার সঙ্গে বিকেলের কথার মিল নেই। সঙ্গে আছে লুটপাট। বাণিজ্যের কাছে পরাস্ত শুভবোধে আওয়ামী লীগের সামনের পথ আসলেই কঠিন। মুশকিল হলো মাঠে কোনো বিরোধী দল নেই। যারা সরকারের চোখে আঙুল দিয়ে সব দেখিয়ে দেবে। এমনও নেই যারা সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। তাই আজ চ্যালেঞ্জ আসছে ভেতর থেকে।
অন্যদিকে বিএনপিতে দেখলাম পুরুষেরা নিস্তেজ হওয়ার পর নারীরাই মারমুখো। মির্জা ফখরুল ত্রাণ বিতরণ করতে এসে তার মতো করে মিষ্টি কথা বলে যাওয়ার পর শুরু হয়ে গেছে মারামারি। নারীদের এই রণরঙ্গিনী মূর্তি আগে দেখিনি। কি উৎসাহ, কি আনন্দ ঝাঁপিয়ে পড়ায়। এর একশ ভাগের একভাগও যদি তারা গঠনমূলক কাজে লাগাত আজ দেশের অনেককিছুতেই পরিবর্তন আসতে পারত। কিভাবে মানুষ ভাববে, দেশ তাদের কাছে নিরাপদ?
আসলে এটাই এখন দেশ ও সমাজের আসল চেহারা। সাধারণ সম্পাদকরা নিজেদের মতো করে বলে যান, যাওয়ার পর কর্মীরা জানেন এগুলো মনগড়া কথা। তাই তারা তাদের জায়গা তাদের আসল তাদের পাওনা আদায়ে মারমুখো হয়ে ওঠেন। এটাই এখন রাজনীতি। আদর্শহীন মূল্যবোধহীন এই সমাজে আজ তাই মানুষ ঘুমিয়ে। জাগলে সে হারিয়ে যায়। নয়তো মারা পড়ে। তাই আর কেউ জাগে না। তবে এর মধ্যেই আছে অশনি সংকেত। আওয়ামী লীগ বিএনপি উভয়ই এখন কাকের মাংস কাকে খায়। কে কাকে বাঁচায়, এই সমাজে আজ?
লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক