‘সামনে বসা ও পেছনে দাঁড়ানো’ ফটোর রাজনীতি!
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
বিষয়টি কাকতালীয় এবং তাৎপর্যম-িত! কেননা গত ২১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজারে নয়াদিল্লি থেকে অগ্নি রায়ের প্রতিবেদন ‘সঙ্ঘকে ধরে দিল্লির কাছে পৌঁছতে চাইছেন খালেদা’, যা পরদিন দৈনিক আমাদের অর্থনীতির প্রথম পৃষ্ঠায় ‘দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়া’ শিরোনামে প্রকাশ পেয়েছে। অপরদিকে ৫ দিনের ব্যক্তিগত সফরে বাংলাদেশে আসা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তোলা একটি ছবিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক চলছে, এমনটাই গত ২১ জানুয়ারি ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতির লেখক সাফকাত রাব্বির ‘টেকিং দ্য রিসেন্ট ফটো কন্ট্রোভার্সি সিরিয়াসলি’ শিরোনামের নিবন্ধে বিবৃত। যা পরদিন ভারতীয় অনলাইন ‘স্ক্রোল ডট ইন’ নিউজপোর্টালে তীর্যকভাবে পরিস্ফুট। এতে শিরোনাম পরিমার্জন করে লেখা হয়েছে, ‘আউটরেজ ইন বাংলাদেশ অ্যাবাউট এ ভাইরাল ফটো অব প্রণব মুখার্জি শুড গিভ ইন্ডিয়া কজ ফর কনসার্ন। হোয়াট ডাজ দ্য ইমেজ অব দ্য ফর্মার ইন্ডিয়ান প্রেসিডেন্ট সিটিং ইনফ্রন্ট অব এ রো অব বাংলাদেশি ডেলিগেটস সে’? অর্থাৎ, প্রণব মুখার্জির ফটোকে ঘিরে বাংলাদেশে সৃষ্ট ক্ষোভে ভারতের উৎকণ্ঠা জন্মাবে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সামনে বসা ভারতীয় সাবেক রাষ্ট্রপতি কিসের প্রতিচ্ছবি?
সেই দ্বিতীয় নিবন্ধের শেষাংশে ‘এন্টি-ইন্ডিয়ানিজম অন দ্য রাইজ’ বা ‘ভারত বিরোধিতা বাড়ছে’ বিষয়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর ভারতীয় নেতৃত্বকে দৃষ্টিভঙ্গী পুনসংশোধনে ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত লেখকের আহ্বান সংবলিত উপসম্পাদকীয়টি যে বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘হিন্দু’ পত্রিকার উপসম্পাদকীয়তেও গুরুত্ব পেয়েছিল, সেই দাবিটি রয়েছে। সেখানে উদ্ধৃতিটি হচ্ছে, ‘এন্টি-ইন্ডিয়ানিজম অব হিস্টোরিক প্রপোরসান্স ইজ অন দ্য রাইজ ইন বাংলাদেশ। দিস ক্যান নট বি, বাই অ্যানি স্ট্যান্ডার্ড, ওয়েলকাম নিউজ ফর ইন্ডিয়ান বিজনেস পলিসি, জিও স্ট্রেটেজি, অর ফর দ্যাট মেটার, কাউন্টার টেরোরিজম মেটার্স রিলেটেড টু বাংলাদেশ’। অর্থাৎ, ঐতিহাসিক অনুপাতে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা বাড়ছে। যা কোনো পরিসরেই বাংলাদেশে ভারতীয় ব্যবসায়িক নীতিমালা, ভূ-রাজনীতি কিংবা সন্ত্রাস দমন প্রসঙ্গে ইতিবাচক খবর নয়। আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের অপরাপর ৪০টি দেশের মতো বাংলাদেশেও নির্বাচনি গণতন্ত্র রয়েছে, যার ভোটাধিকারের জন্য মানুষ রক্ত দিয়েছে। অথচ ভারত বিগত চার বছরে বাংলাদেশের সেই অধিকারকে ধোঁয়াশাভাবে জলাঞ্জলি দিয়েছে বলে অভিযোগ। সেক্ষেত্রে ভারতের জন্য যদি বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তা বিষয়ক হুমকি থেকে থাকে, তবে হঠাৎ ভারত বিরোধী ধারণাগত গণজাগরণ অথবা বাস্তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপটি সম্পৃক্ত।
তথাপি ওই নিবন্ধের মাঝামাঝি ‘হোয়াই সো মাচ ফাস্ ওভার ওয়ান ফটো’ বা ‘কেন একটি ফটো নিয়ে বাড়াবাড়ি’ অংশে বাংলাদেশের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিকটি তুলে ধরেছে। তাতে বলা হয়েছে, হাজার বছরের বর্হিশক্তির শাসনের কারণে বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট শ্রেণিসচেতন। কে কার পা ধরে, কে কার প্রতি অবনত এবং কে কোথায় বসে, এসবই ওই বিতর্কিত ‘কে সামনে বসা ও কারা পেছনে দাঁড়ানো’ ছবিতে প্রতিপন্ন। আর যৌক্তিক বিরূপতায় বলেছে, ‘সফররত ভারতীয় সাবেক রাষ্ট্রপতি সামনে বসা, অথচ বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের সঙ্গে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন পেছনে দাঁড়িয়ে’। আবার বয়সের বিতর্কে চিরাচরিত বাঙালি সংস্কৃতি টেনে বলেছে, ‘৮৯ বছরের এরশাদ ও ৮২ বছরের প্রণব’। পাশাপাশি প্রণব মুখার্জির এই সফরটি যে তার সাম্প্রতিক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশনার পর ঘটেছে তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, তিনি একদিকে যেমন ২০০৮ সালে দুই নেত্রীর মুক্তি নিশ্চিত করেছেন, তেমনি সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের চাকরির নিশ্চয়তার সঙ্গে শেখ হাসিনার ক্ষমতারোহরণের অত্যাসন্নতাকে আগাম প্রকাশ করেছেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার ক্রীড়নক ভূমিকাকে বিমূর্ত করে বলেছে, যারা ওই নির্বাচনে ঘরে ছিলেন, তারা দেখছেন তার অভিযাত্রাটি অপ্রতিরোধ্য। ই-মেইল : নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স