বাংলাদেশ-ভারত : কৌশলগত স্বার্থ
ফজলে রাব্বী খান : বাংলাদেশের সীমান্তের তিনটি দিক ভারত দ্বারা বেষ্টিত, আর অবশিষ্ট দিকটিতে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। একারণে অনেকেই বাংলাদেশকে ওহফরধ খড়পশবফ ঈড়ঁহঃৎু বলে থাকেন। বাংলাদেশের এধরনের ভৌগলিক অবস্থান এদেশের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর। ৯০ক্ক পূর্ব দ্রাঘিমা রেখায় অবস্থিত হাওয়ায় কোন আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা বাংলাদেশ আক্রান্ত হলে এর ধ্বংসলীলা পৌঁছে যাবে ভারতেও। এছাড়া বাংলাদেশ কোন কারণে বৃহৎ কোন শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে ভারত নিজেও নিরাপদ থাকবে না। ভারতের মুক্তিকামী ৭ টি অঙ্গরাজ্য বা সেভেন সিস্টার্সের ৫ টির সীমান্ত বাংলাদেশের সাথে, বাংলাদেশের এই ভূখ- ব্যবহার করে বা কোন গোষ্ঠীর সহায়তায় যদি মুক্তিকামী কোন অঙ্গরাজ্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠে, তবে সেটি হবে ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়া সুবিশাল ভারত মহাসাগরের দিয়াগো গার্সিয়া ছাড়া আর কোথাও মার্কিন সামরিক ঘাটি নেই। তাই বঙ্গোপসাগরে নৌ ঘাটি স্থাপনের ইচ্ছা মার্কিনীদের অনেক পুরানো এবং তা সম্ভব হলে চীন – ভারত বা এশিয়ার দক্ষিণ অংশে মার্কিন আধিপত্য বিস্তার সহজ হবে।সীমান্ত হত্যা অনেক বাংলাদেশিকেই ভারত বিরোধী করে তুলেছে, বিশেষ করে ফেলানি হত্যাকা- বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। সীমান্ত হত্যা ছাড়াও প্রায় অর্ধশত অভিন্ন নদীতে ন্যায্য পানি বণ্টন দুই দেশের জন্য একটি সংবেদনশীল বিষয়। কারণ এর সাথে জড়িত রয়েছে কৃষি ভিত্তিক বাংলাদেশের পরিবেশগত বিষয়। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল এই দুই দেশের মধ্যকার পাহাড় সমান বাণিজ্য ঘাটতি, বর্তমানে যা প্রায় ৪৭৬১.০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বাণিজ্য ঘাটতির সাথে পরোক্ষভাবে যে বিষয়টি জড়িত, তা হল বাংলাদেশী জনগনের উপর ভারতীয় সংস্কৃতির আধিপত্য। এসব সমস্যা সমাধানে ভারত কতখানি আগ্রহী তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে, অবশ্য ভারত সমস্যার সমাধানের চেয়ে বাংলাদেশে ট্রানজিট, গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয়ে বেশী আগ্রহী। নিকালো ম্যাকিয়াভেলির তত্ত্ব অনুযায়ী, ভারত বাংলাদেশের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাবে সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির অনেক বিষয়ই বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই পরস্পর নির্ভরশীলতাকে ভিত্তি হিসাবে ধরে দুই দেশের অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধান হওয়া সম্ভব।
লেখক : প্রকৌশলী
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ