আমেরিকায় যদি ৩২ ধারা থাকত তাহলে ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি ফাঁস হতো না
প্রভাষ আমিন : আমরাতো এতদিন তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবী করছিলাম, সেই আইন বাতিল হয়েছে। তারমানে আমাদের দাবী আদায় হয়েছে। কিন্তু মজাটা হলো, যে দাবী আদায় হওয়ার পরে যে আনন্দটা হওয়ার কথা, সেটা হচ্ছে না। কারণ, নতুন একটা আইন গত সোমবার মন্ত্রীসভা অনুমোদন করেছে। অইনটি হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সাধারন মানুষের সেফ গার্ড হিসেবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকা দরকার ডিজিটাল বাংলাদেশে। কিন্তু আমাদের শঙ্কা হলো, এর আগে তথ্য প্রযুক্তি আইনেও ৫৭ ধারার মাধ্যমে মানুষকে হয়রানি থেকে দুরে রাখার চেয়ে রাজনৈতিকভাবে এবং সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার কাজেই ৫৭ ধারা বার বার ব্যবহার করা হয়েছে। ৫৭ ধারা বার বার ব্যবহার করা হয়েছে বেশির ভাগ সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে। সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করার জন্যই এ আইনটি ব্যবহার করা হয়েছে। ৫৭ ধারার পরিবর্তে এখন যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যেটা এসেছে। মজার ব্যাপারটা হলো, আগের ৫৭ ধারায় যে অপরাধগুলো ছিল, সে বিষয়গুলো খুব কৌশলে চারটি ধারায় আগ-পিছ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে একসাথে থাকতে যতটা ভয়ঙ্কর মনে হয়েছে এখন হয়তো ততোটা ভয়ঙ্কর মনে হবে না। যে ৩২ ধারা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটা আরও ভয়ঙ্কর। কারণ, আগের ৫৭ ধারা ছিল কোন একটি সংবাদ প্রচার করার পর মামলা করা হতো। আর এখন ৩২ ধারায় করা হয়েছে আপনি যে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাবেন, সে যওয়াটাই অপরাধ। আপনি সংবাদ সংগ্রহ করতেই পারবেন না। তারপরেইতো সংবাদ প্রচার এবং প্রকাশের প্রশ্ন। আপনার উৎস আটকিয়ে দিল। ফলে এটা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে একটা সাংঘাতিক ধরনের বাধা। আমেরিকায় যদি ৩২ ধারা থাকত তাহলে ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি ফাঁস হতো না। এরকম অনেক উদাহরণ আছে। সরকার বলেছে যে, এটা সাংবাদিকদের জন্য করা হয় নাই। এটা হ্যাকিং বন্ধের জন্য করা হয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, বার বার এরকম আইনগুলো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হয় বেশি। ফলে আমরা খুবই শঙ্কিত যে, এই আইনটা আমাদের বিরুদ্ধে, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অনুসন্ধানি সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়াবে। আমাদের দাবী হলো, এ আইনটি সংসদে পাস হওয়ার আগেই সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা এ আইনটি পাস করবে না শেষ পর্যন্ত।
পরিচিতি : বার্তা প্রধান, এটিএননিউজ/মতামত গ্রহণ : কায়েস চৌধুরী/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ