আল্লাহর প্রতি লজ্জাবোধ
শায়েখ মাহির আল মু’আইকালি
সত্যিকার মুসলিম তার প্রতি সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টি হতে এমনভাবে লজ্জাবোধ করে যে, তার আনুগত্যে গড়িমসি করে না, তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে ভুলে যায় না। আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজে ভ্রুক্ষেপ করে না। আর আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে না। কারো প্রতি লজ্জাবোধ করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার প্রতি লজ্জাবোধই অধিক উপযোগী। আর রাসুলুল্লাহ (সা) সাহাবীদের এ নসীহতই করেছেন। এক সাহাবী রাসুলুল্লাহ (সা) কে বললেন, আমাকে নসীহত করুন। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহর প্রতি লজ্জাবোধ করার নসীহত করছি যেমন তুমি তোমার কওমের ভালো লোক হতে লজ্জাবোধ কর। (তাবারানী)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা আল্লাহ্ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা কর। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রাসুল (সা)! আমরা তো নিশ্চয়ই লজ্জা করি, সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। তিনি বললেন, তা নয় বরং আল্লাহ্ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, তুমি তোমার মাথা এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা হিফাজত করবে এবং পেট ও এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা হিফাজত করবে, মৃত্যুকে এবং এরপর পঁচে-গলে যাবার কথা স্মরণ করবে। আর যে লোক পরকালের আশা করে, সে যেন দুনিয়াবী জাঁকজমক পরিহার করে। যেলোক এই সকল কাজ করতে পারে সে-ই আল্লাহ্কে যথাযথভাবে লজ্জা করে। (তিরমিজি: ২৪৫৮) রাসুলুল্লাহ (সা) এ হাদীসে চারটি বিষয়ের কথা বলেছেন যেগুলোতে সকল প্রকার কল্যাণ নিহিত আছে। ১) মাথা এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা হিফাজত করা অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতিত কাউকে সিজদা না করা? আল্লাহর প্রতি অহংকার বশত মাথা উচু না করা? এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত চোখ, কান ও জিহ্বাকে হারাম কাজ হতে হিফাজত করা? আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় চোখ, কান ও অন্তর এদের প্রত্যেকটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা ইসরা: ৩৬) ২) পেটকে হারাম ভক্ষণ হতে হিফাজত করা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কলব, দুই হাত, লজ্জাস্থান ও দুই পা হারাম কাজ হতে হিফাজত করা।অন্তর যখন আল্লাহর প্রতি লজ্জায় পরিপুর্ণ থাকে তখন লজ্জাই আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ কাজ হতে মাথা ও পেটকে হিফাজত করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা) দুটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন? তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুকে এবং এরপর পঁচে-গলে যাবার কথা স্মরণ করবে। আর যে লোক পরকালের আশা করে, সে যেন দুনিয়াবী জাঁকজমক পরিহার করে।’ যেব্যক্তি এ কথা মনে করে যে, সে অচিরেই মৃত্যুবরণ করবে এবং পঁচে গলে যাবে এবং অচিরেই পুনরুজ্জীবিত হয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে এবং তার কাছে দুনিয়ার জীবনের সকল কাজ-কর্মের জন্য হিসাব দিতে হবে সে অবশ্যই অসৎ কর্ম নিয়ে আল্লাহ তায়ালার সম্মুখীন হতে খুব লজ্জাবোধ করবে। একজন তাবেয়ী মৃত্যুর সম্মুখীন হলে প্রচ-ভাবে কাঁদতে শুরু করল। যখন তাকে এজন্য ভর্ৎসনা করা হলো তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহর পক্ষ হতে আমার ক্ষমার ঘোষণাও হয়ে থাকে তবু আমি আমার কৃতকর্মের জন্য লজ্জাবোধ করতাম। কোন লোক কারো সাথে ছোট অন্যায় করার পর তাকে ক্ষমা করে দিলেও তার প্রতি লজ্জাবোধ করতে থাকে। দ্রষ্টব্য: গত ১৯ জানুয়ারি হারাম শরীফে প্রদত্ত খুৎবাটি অনুবাদ করেছে মুহাম্মাদ আবু আখতার