ধর্মে মানবকল্যাণের শিক্ষা মাওলানা আবদুল জাব্বার
মানুষের স্বভাবচরিত্রে যেমন আছে প্রেম-ভালোবাসা, দয়া-মমতা; তেমনি আছে হিংসাবিদ্বেষ, ক্রোধ, লোভ, অহঙ্কার প্রভৃতি। এসবের সঙ্গে আল্লাহ মানুষকে দান করেছেন বিচার-বিবেচনা করার ক্ষমতা। আর দোষ কিংবা ভুল করার ক্ষমতা যেহেতু মানুষের স্বভাবগত, সেহেতু ফেরেশতাতুল্য কিংবা নিষ্পাপ হওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মাঝে রইল বিচার-বিবেচনা করার ক্ষমতা। যাকে আমরা ‘বিবেক’ বলে জানি। এটা মানুষের অন্তর্নিহিত এক শক্তি। এ শক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার মানুষকে দিতে পারে তার যথাযোগ্য মর্যাদা। অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার একমাত্র হাতিয়ার হলো- ‘বিবেক।’ সক্রিয় বিবেক মানুষকে দিয়ে সঠিক কাজ করিয়ে নেয়, সঠিক পথে পরিচালিত করে। আর এ শক্তি বলে মানুষ অর্জন করতে পারে আল্লাহর সন্তুষ্টি, মুক্তির পথ, সর্বকালীন কল্যাণকর শান্তিময় জীবন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, যে নিজের প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস। (সূরা নাজিয়াত ৪০-৪১)
বলাবাহুল্য, মানুষকে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য একাধিক কাজ করতে হয়। ফলে কারও পক্ষে শুধু আল্লাহর ইবাদতে অনুক্ষণ মশগুল থাকা সম্ভব নয়। অবশ্য এমন কোনো ধর্মীয় বিধানও নেই। সে যাই হোক, পার্থিব জীবন যাপন করতে যেয়ে মানুষকে নানা সময় নানা কাজে ভালো-মন্দ, ন্যায্য-অন্যায্য নানারকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কল্যাণকর ফল লাভের জন্য বিবেককে কাজে লাগানোর প্রতি উৎসাহিত করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধর্ম মানুষকে শিক্ষা দিয়েছে, যার মূলে রয়েছে আল্লাহ ভীতি তথা আল্লাহর নির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ। কেননা আল্লাহর বিচারের ভয় না থাকলে মানুষ ভালো-মন্দ বিচারের তোয়াক্কা করত না। আর তাই বলা হয়েছে, হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাবান, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি (আল্লাহভীরু)। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত: ১৩)
অনেকে বিবেকের দংশনের ভয়ে বড় ধরনের ত্যাগ স্বীকার করার আশঙ্কা থাকলেও ছোটখাটো অপরাধ করা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। বিবেকের দংশনে দংশিত হওয়ার ভয় যাদের মধ্যে না থাকে, তারা অহরহ বিবেকবর্জিত কাজ (চুরি, ডাকাতি, খুনখারাবি, ঘুষ আদান-প্রদান, ঝগড়া-বিবাদ, অত্যাচার প্রভৃতি) করে থাকে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, চূড়ান্তভাবে সফলতা তাদের দখলেই আসে যারা বিবেকের দংশনের ভয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে পথ চলে। যদিও সাময়িকভাবে বিবেকবর্জিতদের অধিক লাভবান, ক্ষমতাবান বা প্রভাবশালী বলে মনে হয়। অতএব, উত্তম জাতির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে বিবেকবান মানুষ হিসেবে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখাই আমাদের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত।