‘ভাষা আন্দোলনে অগ্রভাগে থাকা নারীদের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে’
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এখনো সম্পূর্ণ করতে পারিনি আমরা। জরুরি হয়ে পড়েছে ভাষা আন্দোলনের তথ্য সংগ্রহ করা। অনেক অজানা বিষয় রয়েছে যা এখনো জানা সম্ভব। অনেক ভাষা সৈনিক এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা এখনো অনেকেই বেঁচে আছেন। কিছুদিন পর আর ভাষা আন্দোলনের সময়কার কাউকে পাওয়া যাবে না। দ্রুত ভাষা আন্দোলন নিয়ে বড় দাগের কাজ করার আহ্বান জানান সুলতানা কামাল।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক কবি সুফিয়া কামালের কন্যা সুলতানা কামাল আরো বলেন, এই আন্দোলনের শুরু থেকেই নারীরা ছিলেন অগ্রভাগে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা ২১ এলে প্রভাত ফেরিতে যাচ্ছে, কিন্তু মূল ইতিহাস জানতে পারছে না। তাই বিষয়টি নিয়ে বেশি বেশি গবেষণা হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের এক জনসভা থেকে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর তৎপরতা চলতে থাকে। সুফিয়া কামালও সেই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন।
তিনি বলেন, সেই পঞ্চাশের দশকের নারীদের সাহসিকতা কেমন ছিল, সমাজ কেমন ছিলো, নানা প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যে কিভাবে মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছেলেদের সঙ্গে রাজপথে নেমেছিলো তা জানতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরের পর ১৪৪ ধারা ভঙ্গের মিছিলে নারীরাও ছিলেন অগ্রভাবে। সেদিন পুলিশের লাঠিতে রওশান আরা বাচ্চু, সুফিয়া আহমেদ, ড. শরীফা খাতুন, হালিমা খাতুন, সারা তৈফুরসহ অনেকেই আহত হন।
সুলতানা কামাল বলেন, আন্দোলনের শুরুতে আনোয়ারা খাতুন ও লিলি খান প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্রহণ করেন। এছাড়া ঢাকার বাইরে অনেক ছাত্রী ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কারণে ফেরারী হন। সেই সব ভয়ানক ইতিহাস জানা দরকার পরবর্তী প্রজন্মের।
৫২-এর ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার জন্যই যে সংগ্রাম হয়েছিল তা নয়। বিভাগোত্তর কালে প্রতিক্রিয়াশীল শাসন ব্যবস্থার ফলে বাঙালির জাতীয়তা, সংস্কৃতি ও জীবন ধারার ওপরে যে আঘাত এসেছিল তারই বিরুদ্ধে ৫২-এর আন্দোলন জনগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের শুরুতে যাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল তারা হলেন আনোয়ারা খাতুন ও লিলি খান। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরীর নাদেরা বেগম ফেরারি হয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন সুফিয়া কামালের বাসায়। ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য কারা বরণ করতে হয় মমতাজ বেগমকে এবং এই কারণে তিনি তালাক প্রাপ্তা হন। এভাবে অনেক অজানা অনেক কথা রয়েছে, যা উঠে আসেনি। সম্পাদনা: তরিকুল ইসলাম সুমন