একটি স্বাধীন দেশের পুলিশ কেন ঘুষ খাবে? শাহরিয়ার কবির
বাড়ছে ছিনতাই সহ সকল প্রকার অপরাধ। কিন্তু ভুক্তভোগীরা সহযোগীতার জন্য থানায় যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন। কারণ, পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। সর্বোচ্চ সাধারন ডায়েরি কিংবা জিডি করে রাখছে। একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশে পুলিশের সংখ্যা আমাদের প্রতিবেশী যে কোন দেশের তুলনায় কম। সে কারণে বহু অপরাধের ঘটনা ঘটছে, পর্যাপ্ত পুলিশের অভাবে যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
আমরা দীর্ঘকাল ধরে পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা বলেছি। এখন তো আমাদের ১১শ নাগরিকের জন্য একজন করে পুলিশ। অথচ আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে ৫০০ জনের জন্য একজন করে পুলিশ। পাকিস্তানে ৪০০ জনের জন্য একজন করে পুলিশ। থাইল্যান্ডে আড়াইশ জন নাগরিকের জন্য একজন করে পুলিশ। থাইল্যান্ডের তুলনায় তো আমাদের পুলিশের সংখ্যা ৪ গুণ করতে হবে। কিন্তু যেহেতু ৪ গুণ করা আমাদের সামর্থের বাইরে, তাই আমরা বলেছি আমাদের জনসংখ্যা অনুযায়ী যা পুলিশ আছে এর সংখ্যা দিগুণ করতে হবে। বহু জায়গায় এসব ছিনতাই কারীদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজসে অনেক গুলো অপরাধের ঘটনা ঘটে। যেমন ফুটপাতে দোকান দিয়ে বসলে এসব দোকান তোলা যায় না। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি মার খেলেন নারায়ণগঞ্জে। এসব দোকান মালিকদের সাথে পুলিশের যোগসাজস আছে। রাজনৈতিক মাস্তানদের সাথে এসব অপরাধীদের যোগসাজস আছে। এর কারণে পুলিশ মামলা নেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করে। কিন্তু এটা করতে থাকলে তো জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। অপরাধ নির্মূল করতে গেলে পুলিশ কে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করতে হবে। এখন সেটার জন্য সে ধরনের পুলিশ দরকার এবং সেই ধরনের মটিভেশন দরকার । সেই বৃটিশ আমল থেকেই বলা হচ্ছে যে, পুলিশের বেতন বা অন্যান্য সুবিধা বাংলদেশে সবচেয়ে কম। এটা নিয়ে ১৯৩৫ সালে পুলিশের একটি ম্যানুয়েলে বলা হয়েছিল। পুশিশের বেতন কম কেন? কারণ, অন্যান্য উৎস থেকে পুলিশের আয় হয়, এর ফলে পুলিশের বেতন কম। একটি স্বাধীন দেশে এটা চলতে পারে না। একটি স্বাধীন দেশের পুলিশ কেন ঘুষ খাবে? তার যদি বেতন পর্যাপ্ত হয়, তাহলে তো তার ঘুষ খাওয়ার কোন দরকার নেই। তখন হয়ত আমরা তাকে কিছু একটা বলতে পারি। পুলিশের সংখ্যা কম থাকার কারণে একজন পুলিশকে ডিউটি করতে হয় ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত। এসব ক্ষেত্রে তো বুঝতে হবে যে, অপরাধ দমন করতে গেলে সেখানে পুলিশের জনসংখ্যা বাড়াতে হবে, দক্ষতা বাড়াতে হবে। তাদের দায়বদ্ধতা বাড়াতে হবে। এবং শাস্তির ব্যাপার টাও নিশ্চিত করতে হবে। কর্তব্যে যদি গাফলতি হয়, কোথাও যদি এমন প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ছিনতাইকারী বা কোন অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজস আছে, তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তবে সেটা কখন দিতে পারব আমরা? যখন বাকী শর্তগুলো আমরা পুরণ করতে পারব। যথেষ্ট সংখ্যক মেধা ও দক্ষতাসম্পন্ন এবং মানুষের প্রতি তার দায়বদ্ধতা সম্পন্ন পুলিশ থাকবে, তখনই আমরা শাস্তির ব্যাপার টা আনতে পারব। অপরাধ বাড়ছে বলে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। তাই শুধু পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোই নয়, অন্যান্য যে সুযোগ সুবিধা গুলো আছে, যেমন: তাদের পরিবহন। তাদের বিশ্রামের কথাও তো একটু ভাবতে হবে। এগুলো না করে একচেটিয়া পুলিশকে দায়ী করা যেমন ঠিক হবে না, আবার অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত পুলিশের শাস্তি নিশ্চিত করাও দৃশ্যমান নয়। অপরাধ দেখা গেলে সর্বোচ্চ ক্লোজ কিংবা বদলি করা হয়। ক্লোজ করা, বদলি করা, এসব কোন শাস্তি নয়। এসব তারা ম্যানেজ করে আবার আগের জায়গায় চলে আসে। এসব ব্যাপারে আমি মনে করি, পুলিশ যদি অপরাধের সাথে যুক্ত থাকে, তবে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
পরিচিতি : সভাপতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
মতামত গ্রহণ : মাহবুবুল ইসলাম
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ