কেন আত্মহত্যা করলেন ‘ফিদেলিটো’
হাসিবুল ফারুক চৌধুরী : কিউবার বিপ্লবের নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর প্রথম সন্তান ফিদেল অ্যাঞ্জেল ক্যাস্ত্রো ডিয়াজ-বালার্ট। বাবার সঙ্গে তার চেহারার অনেক মিলÑ তাই আদর করে ডাকা হতো ‘ফিদেলিটো’ বা ‘ছোট্ট ফিদেল’। পেশায় ছিলেন একজন নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট। পড়াশোনা করেছেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে। ৬৮ বছর বয়স্ক ফিদেল অ্যাঞ্জেল ক্যাস্ত্রো ডিয়াজ-বালার্টকে গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানী হাভানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। কিউবার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র ‘গ্রানমা’র খবরে বলা হয়, গত কয়েক মাস ধরেই তিনি তীব্র বিষণœতায় ভুগছিলেন। একদল চিকিৎসক এজন্যে তাকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন।
ক্যাস্ত্রো পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিউবায় বেশ গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। ডিয়াজ-বালার্টের মৃত্যুর খবর প্রচারের আগ পর্যন্ত অনেকে জানতেনই না যে তিনি মানসিক বিষণœতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কিউবার সরকারের ‘একাডেমি অব সায়েন্সের’ একজন উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৮০ সাল হতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি কিউবার পরমাণু কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর কিউবার এই পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়। ফিদেল ক্যাস্ত্রো ডিয়াজ-বালার্টের জন্ম ১৯৪৯ সালে। কিউবার বিপ্লবের আগে সেসময়ের এক নামকরা রাজনীতিত মির্টা ডিয়াজ-বালার্টকে বিয়ে করেছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। তাদের বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। সেই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম হয় ফিদেলিটোর। ১৯৫৯ সালে ফিদেল ক্যাস্ত্রো বিপ্লবের মাধ্যমে যখন বাতিস্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করেন, তখন মির্টা ডিয়াজ-বালার্ট এবং তাদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পালিয়ে যায়। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর ফিদেলিটো তার শৈশবের কিছু সময় যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন। কিন্তু ফিদেল ক্যাস্ত্রো তাকে কিউবায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। ফিদেলিটোর মায়ের দিকের অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কিউবার সরকারের বেশ কঠোর সমালোচকÑ সেটার কারণ এ থেকেই বোঝা যায়। ফিদেলিটোর এক মামাতো ভাই মারিও ডিয়াজ-বালার্ট এখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সদস্য। ফিদেলিটো নিজে কিউবার বিপ্লবের প্রতি এবং তার বাবার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাবান ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নাকি বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিলেন। বিশেষ করে কিউবার জ্বালানি খাতের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তার মতামতকে সেভাবে আর আমলে নেয়া হচ্ছিল না। তার এক সাবেক সহকর্মী জোনাথান বেনজামিন আলভারাডো রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ফিদেলিটো নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে যেসব পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, সেগুলো কিউবার রাষ্ট্রীয় নীতিতে সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছিল না। সেজন্যেই হয়তো ফিদেলিটো কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।