নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে খালেদা জিয়া হ ‘নির্বাচনে যাওয়ার ছয় শর্ত’ হ জাতীয় ঐক্যের আহবান ভয় নেই বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন, পুলিশ ও সশস্ত্রবাহিনী আছে
মাঈন উদ্দিন আরিফ, রুহুল আমিন ও শিমুল মাহমুদ নাঈম : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলীয় নেতাকর্মিদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাকে কোনো ভয়ভীতি দেখিয়ে দমাতে পারেনি, পারবেও না। আমি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আছি, দেশের মানুষের সঙ্গে আছি। তিনি বলেন, সাহস সঞ্চার করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি প্রধান আরও বলেন, আসুন, সবাই এই দেশটাকে রক্ষা করি, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের অভয় দিয়ে আরও বলেন, বিএনপির কোনো ভয় নেই। বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন, পুলিশ ও সশস্ত্রবাহিনী আছে। এ দেশের জনগণ আছে। দেশের বাইরে যারা আছেন, তারা আছেন। কাজেই বিএনপির কোনো ভয় নেই, ভয়টা আওয়ামী লীগের।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। বেলা ১১টায় খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে শুরু হয় সভা। প্রায় এক ঘণ্টার অধিক সময় তিনি বক্তব্য দেন। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ছয় শর্ত দিয়ে সরকারের কর্মকা-ের কঠোর সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া।
তার বক্তব্যের পর দুুুপুরে সাংগঠনিক সভা শুরু হয়। নির্বাহী কমিটির সাড়ে চারশর মত সদস্য ছাড়াও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্যরা সভায় অংশ নেন। উদ্বোধনী পর্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় প্রয়াত নেতাদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ-শিল্পী-সাহিত্যিকসহ বিশিষ্টজনদের স্মরণ করে দেওয়া শোক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
প্রশাসন সুযোগ পেলে নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে : খালেদা জিয়া বলেন, সরকার প্রশাসনকে দলীয় নেতাকর্মীদের মতো ব্যবহার করছে। তারা মনে করে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়া যায়। কিন্তু প্রশাসন যদি একটু সুযোগ পায়, তাহলে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। কেননা, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তিনি আরও বলেন, পুলিশকে বাধ্য করা হচ্ছে অন্যায় ও দলীয় কাজ করতে।
নির্বাচনে যাওয়ার ছয় শর্ত : বিএনপি চেয়ারপারসন একাদশ সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে খালেদা জিয়ার ৬টি শর্ত হচ্ছে এক. ভোট হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, দুই. জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসার মতো পরিবেশ তৈরি, তিন. ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, চার. নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, পাঁচ. ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে কাজ করা ও ছয়. ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না।
সঠিক রায় দেওয়ার ক্ষমতা বিচারকদের নেই : এসব শর্ত দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের নিম্ন আদালত সরকারের কব্জায় থাকায় সঠিক রায় দেওয়ার ক্ষমতা বিচারকদের নেই। দেশের নিম্ন আদালত যে সরকারের কব্জায়, তা সর্বোচ্চ আদালতও বলছে। সরকারের কথার বাইরে, ভাবনা চিন্তা যাই থাকুক না কেন, তারা বুঝতে পারছে যে এটা সঠিক নয়, কিন্তু সঠিক রায় দেওয়ার ক্ষমতাটা তাদের নেই।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ‘সত্যি কথা বলায়’ সরকার তাকে দেশের বাইরে যেতে এবং পদত্যাগ করতে ‘বাধ্য করেছে’ বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
ঐক্যের আহ্বান : নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘গুম, খুনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ জেগে উঠবে, ২০ দল জেগে উঠবে। সকল রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। আজ দেশের এই অবস্থায় জাতীয় ঐক্য অনেক বেশি প্রয়োজন। আমরা কে কী পেলাম, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের পাওয়া ওটাই হবে, যদি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশটাকে রক্ষা করতে পারি, তবে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় পাওয়া। ইনশা আল্লাহ দেশ জাগবে, জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে।
সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন : নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, বহু সংকট আসবে, ষড়যন্ত্র হবে এবং নানা রকমভাবে ভয়ভীতি দেখাবার চেষ্টা করবে, কিন্তু আমরা ভয়ে ভীতু নই।
দেশে ক্রান্তিকাল চলছে : খালেদা জিয়া বলেন, আমরা এখানে সভা করতে চাইনি। ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, সোহরাওয়ার্দী ছিল, কিন্তু কেন সভা করতে দেওয়া হলো না। বিএনপি সবচেয়ে বড় দল। তারপরও বলবেন দেশে গণতন্ত্র আছে?
ডিজিটাল আইনের নামে নতুন কালাকানুন : ডিজিটাল আইনের নামে নতুন কালাকানুন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। সাংবাদিকরা সত্য কথা বলেন। সেই কথাগুলো যখন মানুষ শোনে, তখন জনগণের অধিকার হরণ করতে নতুন আইন করা হচ্ছে।
নৌকা ডুবেছে : আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে এত আগে প্রচারের কারণ কী? তিনি বলেন, ‘নৌকা এমন ডোবা ডুবছে, যে তোলার জন্য এত আগে ভোট চাইতে হচ্ছে? হাত তুলে ওয়াদা করাতে হচ্ছে।