রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হবে : প্রধান বিচারপতি
এস এম নূর মোহাম্মদ: প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিতে যা কিছু দরকার, তার সবকিছুই করব। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল একটি দেশ উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারে। যেখানে এই অঙ্গগুলোর কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকে, সেখানে উন্নয়ন ব্যাহত হয়। এই তিনটি অঙ্গের কাজের মধ্যে যেন সমন্বয় রক্ষা করা যায় সেজন্য আমি সচেষ্ট থাকব।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পরদিন গতকাল রোববার প্রথম কার্য দিবসে সুপ্রিম কোর্টের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এসব কথা বলেন। এরআগে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতি। এসময় তার সঙ্গে আপিল এবং হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতিরাও এজলাসে অংশ নেন। সব বিচারপতিরা বসা পর্যন্ত ৪ মিনিট দাড়িয়ে থাকেন তিনি। এরপর ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তারপর ১১টা ৫ থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন। আর তারপর বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি।
রেওয়াজ অনুযায়ী আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে নতুন প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। উভয় বিভাগের বিচারপতি ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতারা এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। নতুন প্রধান বিচারপতি প্রথম দিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত ৮টি মামলা নিষ্পত্তি করেন। এরপর দুপুরে ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান তিনি। বিকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতি সৌধে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। এসময় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতিরাও ছিলেন।
সাভারে স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানানো শেষে প্রধান বিচারপতি সেখানে লেখেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৭ কোটি বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশমাতৃকার সংগ্রামে। ৩০ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে লাল সবুজের পতাকা। বিন¤্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি বীর শহীদদের মহান আত্মত্যাগকে। শহীদদের রেখে যাওয়া পতাকার মর্যাদা জীবন দিয়ে হলেও আমরা রক্ষা করবো’।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের এমন ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হবে যেন, আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিমান-দুর্বল, ধনী-গরীব সকলের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মে যে, তারা সকলেই সমান এবং আদালতের কাছ থেকে শুধু আইন অনুযায়ী ন্যায্য বিচার পাবেন। এতে করে আদালতের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা দৃঢ় হবে। বিচারকদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে সততা। তার জবাবদিহিতার জায়গা হচ্ছে বিবেক। সংবিধান ও দেশের আইন তার একমাত্র অনুসরনীয়।
সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, মামলা জটই এখন আদালতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি অকারণে মামলা মুলতবি, প্রত্যাহারের প্রবণতা পরিহার করতে হবে। বিচার ব্যবস্থায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এসময় সংবিধানের ৯৫(২)(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগের আইন প্রণয়ন অপরিহার্য বলেও উল্লেখ করেন নতুন প্রধান বিচারপতি। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম