হযরত শাহজালাল ও শাহ পরানের (র.) মাজার জিয়ারত হ পথে পথে পুলিশি বাধার অভিযোগ হাজারো নেতাকর্মীর উষ্ণ অভ্যর্থনায় সিলেটে খালেদা জিয়া
শাহনুজ্জামান টিটু : নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করতে জিয়া আরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার আগেই হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহ পরান (র.)-এর মাজার জিয়ারত করতে সিলেটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় পৌঁছুলে বিএনপির নেতা-কর্মী তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ইত্যাদি নিয়ে দলীয় নেত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান তারা।
খালেদা জিয়ার আগমন ঘিরে সিলেট শহরের প্রবেশ মুখেই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হন। তাদের ভিড়ে বহরে থাকা গাড়িগুলো অনেকটা ধীরে সার্কিট হাউসের দিকে এগিয়ে যায়। সাড়ে ৪টায় সিলেট সার্কিট হাউজে পৌঁছুলে জেলা বিএনপির শ’ শ’ নেতাকর্মি তাকে স্বাগত জানান। সেখানে ১ ঘন্টা বিশ্রাম নিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট হজরত শাহজালাল (রা.)-এর মাজার জিয়ারত করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। পরে হজরত শাহপরান(রা.)-এর মাজার জিয়ারত করেন তিনি। জিয়ারত শেষে সার্কিট হাউজে ফিরে যান বিএনপি প্রধান। সিলেট সার্কিট হাউজ থেকে রাতেই ঢাকা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর। সিলেটে তার এই সফরে জনসভার মত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি রাখা হয়নি।
সকাল সোয়া ৯টায় গুলশানের বাসা থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যাত্রা শুরু করে। খালেদা জিয়া বসেন গাড়ির সামনে, চালকের পাশের আসনে, যা সচরাচর দেখা যায় না।
গাড়িবহর সিলেটে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কের দুই পাশে নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। এসময় ধরপাকড় করা হয় বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর নারায়ণগঞ্জ পার হওয়ার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে আটক করা হয় মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান ও সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদসহ দশ জনকে।
নরসিংদীতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে আসলে পুলিশি বাধায় পড়েন তারা। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার গাড়ি যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ বিএনপি নেতা কর্মীদের গাড়ি বহরে জুতা প্রদর্শন করেন। এ সময় কয়েকজন ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতা-কর্মীরা গাড়িবহরে জুতা নিক্ষেপ করেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মিছিল করার সময় মহাসড়ক থেকে নরসিংদীতে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি সুলতান উদ্দিন মোল্লা, শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির কামাল সহ ১১ নেতা কর্মীকে আটক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শিবপুরের কামারটেক সবুজ পাহাড় কলেজ এলাকায় খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপি নেতা কর্মীরা এগিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিপেটা করে। অপরদিকে সানাউল্লাহ মিয়াকে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ভৈরব উপজেলায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে আসলে পুলিশ বিএনপি নেতার্মিদের বাধা দেয় এবং সেখান থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি মো. বাহার মিয়া, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জেসমিন সুলতানা, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল মোমেন, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তারিকুজ্জামান ও ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলামসহ ছয় নেতাকে আটক পুলিশ।
পুলিশি বাধার মুখেও খালেদা জিয়ার গাড়ী বহরের পাশে নেতাকর্মীরা তার রায়কে কেন্দ্র করে ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে যেতে দেব না’ এই স্লোগানই দিয়েছে ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত।
ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর আগে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার এই সফর শুধুই জিয়ারতের উদ্দেশ্যে, নির্বাচনী প্রচারের জন্য নয়। এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। যেখানে এখন পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করা হয়নি, সেখানে নির্বাচনী প্রচার কীভাবে হবে বলে ও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গী হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া সর্বশেষ সিলেটে গিয়েছিলেন দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর। সে সময় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন, যদিও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বিএনপি বর্জন করে। সম্পাদনা: ইকবাল খান