বারবার ঘোষণা দিয়েও বন্ধ হচ্ছে না শিশুশ্রম
স্বপ্না চক্রবর্তী : সরকারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তৎপরতা না থাকায় সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ উপেক্ষা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শিশুদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করাচ্ছে। ভারী শিল্প থেকে শুরু করে গৃহকাজেও নিযুক্ত হচ্ছে শিশু শ্রমিক। বারবার ঘোষণা দিলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না শিশুশ্রম।
রাজধানীর কাঁঠালবাগানের ঢালে রড কাটার কাজ করছিল ৯ বছরের শিশু রফিক। রিকশাচালক বাবার রোজগার দিয়ে ৯ জনের বড় পরিবার না চলায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দৈনিক ৮০ টাকা আর দুপুরের খাবারের বিনিময়ে রড কাটার কাজ নেয় সে। তার সাথে আরো রয়েছে সুমন, শান্ত, রমজান। সবাই ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী। এমন বিপজ্জনক কাজে শিশুদের ব্যবহার কেন করছেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দোকান মালিক বলেন, নিজের পরিবারে একটু বেশি উপার্জনের আশায় তারা আমাদের কাছে আসে। কেউ কাজ করতে চাইলে আমরা তো আর না করতে পারি না।
কম টাকায় অধিক শ্রম পাওয়ার লোভেও এসব দোকানের মালিকরা শিশুদের কাজে নেয় বলে মনে করেন অনেকে। শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মুহিদ হাসান তরিৎ বলেন, শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষাপ্রদানসহ তাদের পুনর্বাসনে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও শিশুরা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী না। পরিবারের চাপ বা অর্থনৈতিক সংকটের কারণেই শিশুরা পড়ালেখা ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। শিশুশ্রম বন্ধে এবং তাদের পুনর্বাসনের দাবিতে আমরা সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেয়াসহ বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সেমিনার করেছি। এতে কোনো লাভই হচ্ছে না। একমাত্র সরকারের পক্ষেই সম্ভব শিশুশ্রম বন্ধ করে তাদের পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়া।
যে বয়সে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাবার কথা সেই বয়সে দারিদ্র্যের কবলে পরে ঝুঁকিপূর্ণ ইট ভাঙার কাজ করতে হচ্ছে ৯ বছর বয়সী ইভার। রাজধানীর মগবাজারের নয়াটোলায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের কাজে মায়ের সাথে কাজ করছে ইভাও। জানতে চাইলে বলে, তার বাবা তাদের ৩ ভাইবোনসহ মাকে ফেলে আরেকটা বিয়ে করে চলে গেছে। অন্য ভাইবোনরা ছোট তাই ঘরের খরচ চালাতে কাজ করছে সে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারাদেশে এখন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭৯ লাখ। শুধু রাজধানী নয়, দেশের অন্যান্য জায়গায়ও শিশুশ্রম ব্যাপকহারে রয়েছে। সস্তা শ্রমের জন্য শিশুদেরকেই ব্যবহার করা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। রাজধানীর মহাখালী থেকে সাতরাস্তায় যত লেগুনা (হিউম্যান হলার) রয়েছে সবগুলোতেই হেল্পার হিসেবে কাজ করে ১০ থেকে ১২ বছরের শিশুরা। বিভিন্ন অফিস আদালতে পানির জার বহনের কাজও করছে তারা। হোটেল-রেস্টুরেন্টে শিশুশ্রম আরো ভয়াবহ। ফার্মগেইট, মগবাজার, খিঁলগাঁও, মালিবাগের বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টেই কাজ করে শিশুরা। রাজধানীর বাংলামটর লিংক রোডের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে কর্মরত ৮ বছরের শফিক জানায়, দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু হলে পরিবারের খরচ চালাতে সে একই কাজে যোগ দিয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো ও আইএলওর জরিপ অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে ৪৫ ধরনের। এর মধ্যে ৪১ ধরনের কাজেই সক্রিয়ভাবে আছে শিশুরা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ৭৯ লাখ শিশু শ্রমিকের মধ্যে ১৫ লাখ শহরে, বাকি ৬৪ লাখ গ্রামাঞ্চলে, এর মধ্যে আবার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত ৪৫ লাখ শিশু, ছেলে শিশু শ্রমিক ৭৩ দশমিক ৫০ ভাগ, মেয়ে শিশু ২৬ দশমিক ৫০ ভাগ। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী