ভারতে পেঁয়াজের দাম কমেছে, দেশে কবে?
মোরশেদ মুকুল : ভারতে যেহারে পেঁয়াজের দাম কমানো হয়েছে, সে হারে বাংলাদেশ কমাইনি। এখন একজন ব্যবসায়ী যে দামে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনবেন, সেই দামেই রফতানি করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছে ভারতের রফতানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (ন্যাফেড)’। যা শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে হিলি কাস্টমসে এসে পৌঁছায়। একইসঙ্গে কাস্টমসের সার্ভারেও তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এখন পেঁয়াজ রফতানিতে আর কোনও ন্যূনতম রফতানি মূল্য থাকলো না। তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে এখন ক্রেতাদের প্রশ্ন ভারতে পেঁয়াজের দাম কমেছে, তাহলে বাংলাদেশে কমবে কবে?
জানতে চাইলে কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘ভারত সরকার যখন পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়ায়, তখন বাংলাদেশেও বাড়ে হু হু করে। কিন্তু ভারত সরকার প্রথম পেঁয়াজ রফতানির ন্যূনতম মূল্য (এমইপি) কমিয়েছে। পরবর্তী সময়ে ন্যূনতম মূল্য পুরোপুরি তুলে নিয়েছে। কিন্তু এখনও এর প্রভাব বাজারে পড়েনি।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশের খুচরা বাজারে এখনও দেশি পেঁয়াজের কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা আর আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে দেখানো হয় নানা অজুহাত। এর প্রথম অজুহাত হলো ‘দাম কমানোর পর পেঁয়াজ এখনও আসেনি’, ‘এই পেঁয়াজ আগে বেশি দামে কেনা ছিল’। কয়েক দিন আগে এই দাম দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা ও ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজের কেজি ১১০ টাকা ছুঁয়েছিল।
অন্যান্য বছর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে পেঁয়াজের কেজি প্রতি দাম গড়ে ২৫ থেকে ৪০ টাকা থাকে। কিন্তু এ বছর এখনও প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। গত মৌসুমে ভারতেও প্রচ- খরার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়।
সেখানেও বাড়ে পেঁয়াজের দাম। আমদানিতেও পড়ে তার প্রভাব। এর প্রভাব পড়ে দেশের খুচরা বাজারেও।
জানা গেছে, গত দুই মাসে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে টন প্রতি ৮৫০ ডলারে ঠেকেছিল। ২০ জানুয়ারি থেকে সেই দাম কমে টন প্রতি দাঁড়িয়েছিল ৭০০ ডলার।
জানা গেছে, ভারতে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় আড়ত লাসাগাঁও এবং নাসিকে দামে ধস নামার কারণে গত আগস্টে প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) ২ হাজার ৬০০ ভারতীয় রুপিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ দাম কমতে কমতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ৯০০ রুপিতে নেমেছে! অর্থাৎ আড়তে প্রতি কেজির দাম ৯ রুপি, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১ টাকা। নাসিক ছাড়া অন্য আড়তেও পেঁয়াজের দামে ধস নেমেছে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয় ভারতের মহারাষ্ট্রের লাসাগাঁও ও নাসিক থেকে। ভারতের বাজারে দামে ধস নামলেও দেশের আড়তে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। অথচ ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে দেশের বাজারে হু হু করে বাড়ে। কিন্তু ভারতে কমলেও দেশে কমার কোনও লক্ষণ নেই।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাওরানবাজারে ৫০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও ঢাকার অন্যান্য কাঁচাবাজার ও পাড়া-মহল্লায় দাম আরও বেশি। খুচরাপর্যায়ে এখনও এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ৬৫ টাকা লাগছে। তবে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বলছে, গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছর জুলাইয়ের শেষভাগে হঠাৎ করে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকার ওপরে ওঠে। এর মধ্যে পরিস্থিতি সামলাতে ভারতের বিকল্প হিসেবে মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
এরপর অতিবৃষ্টিতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বন্যার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হলে দেশটির সরকার রফতানি মূল্য (এমইপি) বাড়িয়ে দেয়। ফলে আরেক দফা ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তখন দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২০-১৩০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২২ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাতকরণ ঘাটতি বাদে প্রায় ১৭ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে। দেশে বাৎসরিক চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের উৎপাদন ঘাটতি প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন। এই ঘাটতি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।
জান গেছে, ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কৃষিপণ্যের রফতানি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে পেঁয়াজের ন্যূনতম মূল্য কমানো হয়েছে।