বই প্রকাশ করতে হলে তার মানদন্ড দেখতে হবে ইমরান মাহফুজ
বই মেলাটি লেখক পাঠক একত্রিত হওয়ার একটি ভালো আয়োজন। তবে এটি প্রাণের মেলা কি-না সেটির একটি স্বতন্ত্র অর্থ দাবি করে। আসলে বই মেলাতে প্রাণ আছে কি-না? তবে এটি একটি উৎসব, যেটি আমরা উদযাপন করি। এমন মেলা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। বই নিয়েও এতো মানুষের উচ্ছাস আর কোথাও নেই। বই মেলাটি সমৃদ্ধ হবে তখন, যখন এটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলা হবে। আমাদের বই প্রকাশ করতে হলে তার মানদন্ড দেখতে হবে।
আমাদের মেলায় যেই বইগুলো আসে, তার কোনো মানদন্ড নেই। এটির জন্য বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে হবে। তারা যদি ভালো মানের বই বের করার কাজটি করেন, তাহলে যারা পাঠক তারা একটি ভালো বই কেনার সুযোগ পায়। মেলাটি যদি বাংলা একাডেমি নিজে করে তাহলে এই কাজগুলো সম্পন্ন করে মেলার আযোজন করা দরকার। তারা না পারলে প্রকাশক সমিতি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিলে তারা ভালো মানের বই বের করার কাজটি করবেন বলে আমি আশা করি। আবার মানের ব্যাপারে বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও দায়িত্বটি ভাগাভাগি করতে পারে। এর মধ্যে বইয়ের রয়েলিটি ঠিক করে দিবে বাংলা একাডেমি আর মান দেখবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। আমি একজন লেখক। এবারের মেলায় মা মাটি ও মানুষের জয়গানের ঐতিহ্য (প্যাভিলিয়ন ১৬) থেকে আমার কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ আসছে, ইমরান মাহফুজের দীর্ঘস্থায়ী শোকসভা শিরোনামে। প্রথম সংস্করণে বইটি ইতোমধ্যে কবিতা প্রেমিদের কাছে আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এটি আমরা প্রথম কবিতার বই। বইটি নিয়ে বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি আল মাহমদু বলেছিলেন, তরুণদের সঙ্গ আমি বরাবরই পছন্দ করি। আর ইমরানকে চিনি অনেকদিন। প্রায় সে তার কবিতা শোনায়। কবিতার বই ‘দীর্ঘস্থায়ী শোকসভা’ আবচা চোখে প্রচ্ছদ দেখার সুযোগ হলো। ভালো লাগলো। কবিতাগুলোতে নতুনত্ব আছে। পরিশ্রম আর সাহিত্য মনে লেগে থাকলে একদিন অনেক দূর যাবে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম কবি জয় গোস্বামী বলেছিলেন, ‘দীর্ঘস্থায়ী শোকসভা’ পড়লাম। নামটা বেশ চমৎকার। প্রথম কবিতার বই দিয়ে নতুন কিছু বলার চেষ্টা করছে। পুরোটা পড়লে বিস্তরিত বলা যাবে।
আমি আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই- আমি ভালো লিখি না, তবে কারো মতো লিখি না। আমি ত্রিচোখে জীবনের সমীকরণে মা মাটি মানুষের সাথে মিশিয়ে নিয়েছি নিজেকে। আত্মপরিচয়ের জন্য কাল থেকে কালান্তরের নায়কদের চাপাথাকা জীবন ও কর্মের গল্প জেনে কবিতায় বলেছি। ফলে প্রথম কবিতার বই ‘দীর্ঘস্থায়ী শোকসভা’ প্রকাশ হবার পর ব্যাপক সাড়া জাগায়।
নতুন ভাবনায় দ্বিতীয় মুদ্রণে মাধ্যমিক সকাল : গাছের ছায়ায় মাছের জীবন, উচ্চ মাধ্যমিক সকাল : মেঘের আয়োজনে নগরে মিছিল, ও সম্মান সকাল : মুখোশের পাঠশালায় ঘাসফুলের কান্না এই তিনটি পর্বে ৬০টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একজন মানুষের জীবনকাল তিনটি ধাপে ভেবে উপশিরোনামে নতুন একটি ফর্ম উপস্থাপন করেছি।
আর মহাকালের চাইতে সমকালের জীবন দুপুরে পৌঁছতে পারে না। ফলত আমার দেখা জীবনকে সকালরূপে দেখে, চেষ্টা করছি অস্তিত্বের উপস্থিতি নিশ্চিত করার। তবে জীবনের জয়গানে কবিতাগুলো মা মাটি মানুষ, নদী, নারী, প্রকৃতি, সমাজ ও রাষ্ট্র ও রাজনীতিসহ আমার দেখা একযুগের (২০০৫-২০১৭) জীবন নিয়ে লিখিত। এক কথায়- শোকসভা আমাদের দীর্ঘকালের আত্মপরিচয়।
উল্লেখ্য এই পর্যন্ত আমার ৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে- ‘মুক্তিযুদ্ধ : অজানা অধ্যায়’ (জাগৃতি), ‘লালব্রিজ গণহত্যা’ (১৯৭১: গণহত্যা ও নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট), সম্পাদনা আবুল মনসুর আহমদ স্মারকগ্রন্থ (প্রথমা স্টল), সম্পাদনা আবুল মনসুর আহমদ জীবনশিল্পী ( ডেইলি স্টার বুকস) , ইকুয়েশন অব লাইফ (কালের ধ্বনি) সবগুলো বই একসাথে বাংলা একাডেমির বট তলায় ৫৭ নং কালের ধ্বনি স্টলে পাওয়া যাবে।
পরিচিতি : লেখক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক
মতামত গ্রহণ : গাজী খায়রুল আলম
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ